আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গুঞ্জনই সত্য হলো। নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি পাসের প্রতিবাদে আসামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভারত সফর স্থগিত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোও। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ভারত সফর এড়ানোর পর আবের সরকার এই সিদ্ধান্ত জানালো।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইটারে এক বার্তায় বলেন, ‘দু’পক্ষ (আবের) এ সফর পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা নিকট ভবিষ্যতে পারস্পরিক সুবিধামতো দিনে হবে।’

সম্প্রতি সিএবি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপনকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অদ্ভূত বক্তব্য দেন। তিনি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব দেশে লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে সেসব শরণার্থীদের অধিকার দেয়া হবে। উল্লিখিত তিন দেশ থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’

এ নিয়ে দ্বিমত স্পষ্ট করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার বক্তব্যে অসন্তোষও প্রকাশ পায়। এরপর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ড. মোমেন তার পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও তার শুক্রবারের (১৩ ডিসেম্বর) নির্ধারিত মেঘালয় সফর স্থগিত করেন।

নয়াদিল্লিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ১৫ ডিসেম্বর (রোববার) থেকে তিন দিনের ভারত সফরে আসার কথা ছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের। গত সপ্তাহেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার ঘোষণা দেন, ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবের বৈঠকের কর্মসূচিও রয়েছে। সূত্র বলছিল, সেই বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল আসামের গৌহাটিতে।

কিন্তু বিতর্কিত সিএবি পাসের পর আসামজুড়ে বিক্ষোভ-সংঘাত শুরু হলে জাপানের জিজি প্রেস জানায়, আবে তার সফর বাতিলের চিন্তা-ভাবনা করছেন। শেষ পর্যন্ত রবীশ কুমারই জানালেন আবের সফর স্থগিত করার কথা।

কলকাতা ও গৌহাটির সংবাদমাধ্যম বলছে, নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের পর সিএবি পাসের প্রতিবাদে আসামের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে ভারত সরকার সেনা মোতায়েন করে কারফিউ জারি করলেও রাস্তায় নামে লাখো জনতা। বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত তিন জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে, আহত হয়েছে আরও অনেক বিক্ষোভকারী।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিলের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের সফরও স্থগিত হয়ে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে নয়াদিল্লির। যদিও বাংলাদেশের মন্ত্রীর সফর বাতিল প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলছেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল করা এবং সিএবি পাসের বিষয়টিকে পৃথকভাবে দেখা উচিত।…ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং মজবুত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল এবং নাগরিকত্ব বিল পাস হওয়া, দু’টি আলাদা ঘটনা। নয়াদিল্লি না আসতে পারার কারণ হিসাবে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটিকেই মানা উচিত।’’