মোঃ রুকুনুজ্জামান বাবুল ,পার্বতীপুর (দিনাজপুর) :

দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ জন্য ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যৌথভাবে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ লাইন করা হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও সহজ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল)’ প্রকল্পের আওতায় ট্যাপ অব পয়েন্ট (সোনাপুকুর-চিরিরবন্দর) থেকে সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মিত হবে। ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনটি মাটির নিচ দিয়ে নির্মিত হবে। প্রকল্পের জন্য ১৮৭ দশমিক ৩৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ১২৬ দশমিক ১৪ একর ভূমি হুকুম দখল করা হবে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিপিসি। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি ২৩ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। তাছাড়া, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি সেচ মৌসুমে বেশি জ্বালানি প্রয়োজন হয়ে থাকে। ওই সময় জ্বালানি তেলের চাহিদা আরও বাড়ে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌপথে ও রেলপথে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নৌপথে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও কুড়িগ্রামের চিলমারী, রেলপথে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো, রংপুর ডিপো, নাটোর, রাজশাহী জেলার পবার হরিয়ানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। ফলে সিস্টেম লস বাড়ে। আর সিস্টেম লস কমাতেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিপিসি।

বিপিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় আসামের নুমালীগড় শোধনাগার থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করবে সরকার। শিলিগুড়ির মার্কেটিং টার্মিনাল (এসএমটি) থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপ লাইন নির্মিত হবে। এর মধ্যে ভারতের অংশ ৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অংশ ১২৫ কিলোমিটার।

বিপিসি সূত্র আরও জানায়, পাইপলাইন নির্মাণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অংশে পঞ্চগড়, সৈয়দপুর ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল এবং তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে ৬টি ট্যাংক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সৈয়দপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) ট্যাপ অব পয়েন্ট করা হবে। চিরিরবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ৮ ইঞ্চি ব্যাসের মাটির নিচ দিয়ে পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করবে বিপিসি। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখলের জন্য ৩টি জেলার জেলা প্রশাসককে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বিপিসি।

সূত্র থেকে আরও যানা যায়, সৈয়দপুরে ৭৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। দেশে প্রতিনিয়তই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বার্ষিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল প্রয়োজন হবে। তাই বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে তেল পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শুধু ভূমি অধিগ্রহণ কাজ করবে। বাকি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করবে ভারত।