বার্তা পরিবেশক:

কক্সবাজারের খরুলিয়া দরগাহ পাড়া এলাকায় প্রতিনিয়তে হামলা চালিয়ে এক প্রবাসীর দোকানঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে আমিনুল হক নামে একব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রবাসী নুরুল কবিরের স্ত্রী আমিনা খাতুনকে হামলা চালিয়ে গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর রাতে দোকানঘর দখলে নেন আমিনসহ তার সহযোগিরা। এই ঘটনায় বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আমিনা খাতুন। আমিনা খাতুন ঝিলংজা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড খরুলিয়া দরগাহ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। আমিনুল হক একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব মোক্তারকুল এলাকার আব্দু শুক্কুরের ছেলে।
সূত্রে জানা গেছে, খরুলিয়া মোজার আর,এস খতিয়ান নং-১১৯২, বি,এস ১৪০১, ১৪০৩, ১৪০৪ নং দাগের মোট জমির পরিমাণ ০.৩৮ একর। এসব দাগের পরিমাণ জায়গা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে পৈতৃক মালিকানাধীন আর,এস রায়তী স্বত্বীয় মূলে ভোগ দখল করে আসছে প্রবাসী নুরুল কবির। উক্ত জায়গায় বসতগৃহের সামনের অংশে ৫টি দোকান রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে স্থানীয় আমিনুল হক একটি দোকানঘর দখলের পায়তারা চালায়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য লোকজনের সমঝোতার প্রেক্ষিতে আমিনুল হককে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধের কথা সাব্যস্থ হলে ২০১৫ সালে কক্সবাজার শাখার ইউসিবি ব্যাংকের একটি চেক প্রদান করে। এর পর থেকে বিভিন্ন দফায় আমিনুল হককে সব টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরিমধ্যে নুরুল কবির চেক ফেরত না নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। টাকা পরিশোধের বিষয়টি স্থানীয় গন্যমান্যরা অবগতও রয়েছে। এরিমধ্যে গত এক বছর ধরে ফের চেকটি নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে আমিন।
অভিযোগে জানা গেছে, নুরুল কবির প্রবাসে থাকার সুবাদে পুনরায় টাকার ইস্যু তুলে একটি দোকানঘর দখলের চেষ্টা চলায়। এর ধারবাহিকতায় গত ২৯ নভেম্বর রাত ২ টার দিকে দোকানঘরের তালা ভেঙে তারা দখল করে নেন। এমনকি তারা দোকানের বিভিন্ন কাজকর্ম করতে থাকে। এই বিষয়ে ৩০ নভেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় আমিনুল হককে প্রধান করে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। এরপরও থেমে নেই তারা।
ভুক্তভোগি আমিনা খাতুন জানান, পুলিশকে অভিযোগ দায়ের করেও কাজ হচ্ছে না। দখলকারীরা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। পুলিশ বৈঠকে বসতে বলেও বসে না তারা। অভিযোগ দায়ের করার পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যার ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর রাতে আমিনুল হক, তার ভাই নুরুল আলম ও খোরশেদসহ একদল দুর্বৃত্ত এসে দোকান ঘরে আবার কাজ করতে থাকে। বিষয়টি আমি আচঁ করতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয়ে সদর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম (ঘটনার বিষয়টি আগে থেকে অবগত তিনি) কে ফোনে জানায়। এই সময় দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তাদের হামলায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হয়। এক পর্যায়ে যৌন হেনেস্তাও করে তারা। এমনকি হামলার পরপরেই তারা আমার শরীরের থাকা স্বর্ণলংকার ছিনিয়ে নেন। পরে এলাকাবাসীরা থাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৫ম তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আমিনা খাতুন আরো অভিযোগ করেন, গেল সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার করেছিল দোকানঘরটি। এমপির কথায় দোকানঘরটি অল্পদিনের জন্য অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছিল তার স্বামী নুরুল কবির। এখনো দোকানের উপরে নৌকার প্রতীক রয়েছে। ওই সুযোগটাকেও কাজে লাগিয়ে দখলের খুটি মজবুত করেন আমিনুল হক। অথচ এমপি সাহেবে দোকানঘরটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু তারা ছাড়ছে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমিনা খাতুন গত একমাস আগে অভিযোগ দায়ের করেছিল। এর ভিত্তিতে ওই জায়গায় কাজ না করার জন্য বলা হয়েছিল আমিনুল হককে। সমাধানের একটি সময়ও দেওয়া হয়েছে উভয় পক্ষকে। কিন্তু তার আগে ওই মহিলাকে হামলা চালিয়েছে। তবে এখনো মহিলার কাছ থেকে কোনো এজাহার পাওয়া যায়নি। এজাহার পেলেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
জানতে চাইলে আমিনুল হক সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নুরুল কবিরের কাছ থেকে টাকা পাওনা আছি আমি। আমার টাকা দিয়ে দিলে জায়গা ছেড়ে দিবো। এবিষয়ে চেকও রয়েছে। চেক নিয়ে আদালতে মামলাও দায়ের করেছি আমি। এখানো কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীকে হামলার বিষয়টি আমি অবগত নয়। তবে কেউকে অন্যায় করতে দেওয়া হবে না। এবিষয়ে আমি দেখছি। সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হবে।