এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া:
চকরিয়ায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৯ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চকরিয়া এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মহান জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন। এ সময় সনাক চকরিয়ার সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম শাহাবুদ্দিন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সভাপতি মো. নোমান, টিআইবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এজিএম জাহাঙ্গীর আলম ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক সনাক ও দুপ্রক নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন বলেন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে একাত্ম হয়ে জনগনকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার শপথই হোক আগামীর সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অঙ্গীকার।

উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি চকরিয়া উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে থানার মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে সনাক সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে একাত্মতা ঘোষণা করে ও নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষনা করে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম লিটু ও দুপ্রক সভাপতি মো. নোমান। মানববন্ধনে সনাক-টিআইবি নেতৃবৃন্দ, দুপ্রক নেতৃবৃন্দ, ইয়েস সদস্য ও সর্বোস্তরের জনগন স্বত:ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে টিআইবি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য নিন্মোক্ত সুপারিশমালা প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করা হয়। এসব সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বাস্তব সুফল নিশ্চিতে যে কোন প্রকার ভয় বা করুণার ঊর্ধ্বে থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না” এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অভীষ্ট অর্জনে সকল অভীষ্টের কার্যকর বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে অভীষ্ট ১৬ এর ওপর সর্বাধিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংগঠনসমূহ যাতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে, তারজন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সকল নাগরিকের বাক্-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও ‘ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অ্যাক্ট’এর নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। ঋণ খেলাপিতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং বেসরকারি ব্যাংকের নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের জন্য নিরপেক্ষ, যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পেশাদারি উৎকর্ষ ও কার্যকরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।এছাড়া সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর কার্যকর প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে তথ্যের আবেদনকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ বাস্তবায়নের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ আইন সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির ওপর সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে দুদকে নেতৃত্ব পর্যায়ে অকুতোভয় সৎসাহস, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে অর্পিত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্তমূলক কার্যকরতা নিশ্চিত করতে হবে।