সিবিএন ডেস্ক:
দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহায়তা বাড়াতে মিয়ানমারকে সাবমেরিন দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ভারত। আগামী বছরের শুরু থেকেই সাগরের তলদেশে দাপিয়ে বেড়াবে মিয়ানমারের নৌসেনারা। এর জন্য তাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিচ্ছে ভারত।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, রাশিয়ার তৈরি তিন হাজার টন ওজনের সাবমেরিন আইএনএস সিন্ধুবীর ৩১ বছরের পুরনো হলেও এটি নিয়মিত সংস্কার করা হয়েছে। বিশাখাপত্তমের হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ডে নিয়ে যুক্ত করা হয়েছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র।

কবে নাগাদ সাবমেরিনটি হস্তান্তর করা হবে এ বিষয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী কিছু না বললেও সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলেই মিয়ানমার সাবমেরিনের ব্যবহার শুরু করবে।

শুধু ভারত থেকেই নয়, মিয়ানমার রাশিয়া থেকেও আরেকটি সাবমেরিন সংগ্রহ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন কিনেছে। তাছাড়া চীনের সহযোগিতাতেই কক্সবাজারে একটি সাবমেরিন ঘাঁটি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর প্রেক্ষিতে নিজেদের নৌসক্ষমতা বাড়াতে সাবমেরিন সংগ্রহ করছে মিয়ানমার।

সেক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করায় ভারতের সবচেয়ে বড় স্বার্থ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের আগ্রসন প্রতিরোধকে। বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাববৃদ্ধি ঠেকানোর পরিকল্পনা থেকেই সাবমেরিন দেওয়াসহ প্রতিরক্ষা খাতে সম্পর্ক জোরদারে নজর দিয়েছে ভারত।

শুধু সাবমেরিন দেওয়াই নয়, ভাইজাগের সাবমেরিন স্কুলে মিয়ানমারের নাবিকদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে ভারত। এছাড়া গত কয়েক বছরে ইয়াংগুনে প্রশিক্ষকদের বেশ কয়েকটি ছোট টিমও পাঠিয়েছে তারা।

ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে, রয়েছে যৌথ জলসীমাও। তবে ভারতের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি চীনের মতো বিশাল না হওয়ায় তারা সাধ্যমতো কূটনেতিক, অর্থনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে মিয়ানমারকে বশে রাখার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমারের সেনাদের ভারতে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও দেশ দু’টির মধ্যে এখন নিয়মিত যৌথ অনুশীলন, নৌমহড়া ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চেই ভারত-মিয়ানমার সেনাদের যৌথ অনুশীলন হওয়ার কথা রয়েছে।

মিয়ানমারকে প্রতিরক্ষামূলক সহায়তার খাতিরে সামুদ্রিক টহল জাহাজ, গানবোট, মর্টার, গ্রেনেড লঞ্চার, বন্দুক প্রভৃতি সরবরাহ করেছে ভারত। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক সরঞ্জামও পাচ্ছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিগেট ও করভেটের জন্য বিশেষ ধরনের রাডার।

এছাড়া, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোয় অভিযুক্ত মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকায় গত জানুয়ারি থেকে ‘অপারেশন সানরাইজ’ নামে চালানো যৌথ অভিযানে বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি ধ্বংস ও বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের এনএসসিএন, উলফা, এনডিএফবির সদস্যরা; আর মিয়ানমারের রয়েছে আরাকান আর্মি ও কাচিনের স্বাধীনতাকামীরা। এসব সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের দমনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।