মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বেসরকারি টেলিভিশন আনন্দ টিভি’র চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, কক্সবাজারের সন্তান এম.এম আকরাম হোসাইন রিপোর্টিং এ চট্টগ্রাম বিভাগের বর্ষসেরা এওয়ার্ড পেয়েছেন। চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন (টিসিজেএ) এর উদ্যোগে সংগঠনটির যুগপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের ভূমিপুত্র এম.এম আকরাম হোসাইন এ মর্যাদাবান এওয়ার্ড অর্জন করেন। শুক্রবার ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় স্কয়ার কনভেনশন হলে তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এম.এম আকরাম হোসাইনকে এ এওয়ার্ড তুলে দেন। চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন (টিসিজেএ) এর শফিক আহমেদ সজীবের সভাপতিত্বে ইনডিপেনডেন্ট টিভি’র চট্টগ্রাম অফিস প্রধান অনুপম শীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। উপকূলের ভয়ংকর জলদস্যুকে নিয়ে রিপোর্টিং এর উপর এম.এম আকরাম হোসাইন এ গুরুত্বপূর্ণ এওয়ার্ড অর্জন করেছেন। বর্ষসেরা টিভি রিপোর্টিং প্রতিবেদক নির্বাচনে চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন (টিসিজেএ) এর এই আয়োজনে জুরি বোর্ডের বিচারক ছিলেন (১)কামাল পারভেজ, আঞ্চলিক সম্পাদক, চ্যানেল ২৪, (২) সুবীর মহাজন, সহযোগী অধ্যাপক, নাট্য কলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও (৩) ফারুক ইকবাল, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, দৈনিক দেশ রুপান্তর।

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব উজানটিয়ার মালেকপাড়ার হাজী মোহাম্মদ আমিন সিকদার ও হোসনে আরা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র এম.এম আকরাম হোসাইনের জন্ম ১৯৯২ সালের ২৯ মে। সে হিসাবে তাঁর বয়স প্রায় ২৮ বছর। চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে কৃতিত্বের সাথে এস.এস সি পাশ করেন। চিটাগাং মেট্রোপলিটন কমার্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইসএসসি পাশ করেন ২০০৯ সালে। চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন সফলতার সাথে। কিন্তু ছোটকাল থেকেই সখ ছিল মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করবেন। তাই এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করার পরও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ডিগ্রী নিয়েছেন দুঃসাহসী জানবাজ এই গণমাধ্যমকর্মী।

২০১৫ সাল থেকেই নিজেকে সাংবাদিকতা পেশার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ফেলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত থেকে প্রাইভেট চ্যানেল বিজয় টিভিতে কাজ করেছেন-২০১৬ সাল থেকে প্রায় দু’বছর। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এম.এম আকরাম হোসাইন যোগ দেন-দেশের অন্যতম বেসরকারি টিভি চ্যানেল-২৪ এ। গত অক্টোবর মাসে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হিসাবে যোগ দেন বেসরকারি টেলিভিশন আনন্দ টিভি’তে। জীবনের একাকীত্ব ঘুছিয়ে মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুমাইয়া আকতার সুমু’কে জীবনসঙ্গী করেছেন প্রায় ২ বছর আগে। বড়ভাই এডভোকেট মোকাররম হোসেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র সদস্য ও দুদকের প্যানেল আইনজীবী। তাঁর সহধর্মিণী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক।
মানুষ অপরাধ করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে নিষিদ্ধ ও অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়ে যায়। সেই নিষিদ্ধ জগতের মানুষের সাথে সুকৌশলে সম্পর্ক করে জীবনবাজী রেখে তাদের আলোর মুখ দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনাই এম.এম আকরাম হোসাইনের নেশা। অপরাধ জগতের ভয়ংকর ও দুধর্ষ মানুষ গুলো স্বাভাবিক জীবনের যখন ছোঁয়া পায়-তখনি তিনি তৃপ্তির ঢেকুর গিলতে থাকেন। নিজের অনাগত কর্মের জন্য আরো উৎসাহী হয়ে উঠেন। আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী যখন এসব পেশাদার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হিমশিম হয়ে পড়েন-তখন একজন সাধারণ মানুষ হয়ে নিষিদ্ধ ও অন্ধকার জগতের এসব কুখ্যাত অপরাধীদের সাথে তিনি দূতিয়ালি করে নির্ভয়ে জানবাজী রেখে তাঁদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন এম.এম আকরাম হোসাইন। আর যখন তিনি দেখতে পান, দূতিয়ালি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া ভয়ংকর সশস্ত্র অপরাধীরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যস্ত, তখনি তিনি নিজেকে একজন সফল সমন্বয়কারী হিসাবে গর্ববোধ করেন, পুলকিত হন। কারণ-এই প্রক্রিয়াতে অপরাধী, রাষ্ট্র ও জনগণ সবাই খুবই উপকৃত হন। পেশা, জস,খ্যাতি কিংবা অর্থের জন্য নয়, শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ, বিবেকের তাড়না ও দেশপ্রেম থেকেই এই বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজটি তিনি করে থাকেন। এ উপকূলে শান্তি ফিরাতে এম.এম আকরাম হোসাইনের এ দুঃসাহসিক কাজ তাঁকে এনে দিচ্ছে একের পর এক বিরল সম্মাননা।

গত ২৩ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আত্মসমর্পণ করা ৯৬ জন জলদস্যু, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগর এই জানবাজ গণমাধ্যম কর্মীর মধ্যস্থতায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এর কাছে ভয়ংকর ১৫৫ অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম ও প্রচুর গোলাবারুদ সহ আত্মসমর্পণ করে। এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এ দুঃসাহসিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এম.এম আকরাম হোসাইনের হাতে তুলে দেন বিশেষ সম্মাননা পদক। যা ছিল কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য একটা গর্বের বিষয়।

এছাড়া বিগত সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণকৃত ৬ টি কুখ্যাত সশস্ত্র জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যুর মধ্যে ৫ টি সশস্ত্র ভয়ংকর বাহিনীর ৩৭ জন জলদস্যুকে মধ্যস্থতা করে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলেন এই দেশপ্রেমী গণমাধ্যম কর্মী, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী এম.এম আকরাম হোসাইন। যে ৪৩ জন জলদস্যু এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছেন। জলের কুমিরকে ডাঙ্গায় আনতে এই প্রতিভাবান গণমাধ্যমকর্মীর ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং এ কাজ সারাদেশে সাড়া ফেলেছে।

এম.এম আকরাম হোসাইন কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি। মরননেশা ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজদের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফেরাতে নেমে যান আরেকটি মিশনে। যখানে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন ও রতি মহারতিরা দেশে বিদেশে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সে চেষ্টাকেও সফলতার মুখ দেখিয়ে ইয়াবানগরী খ্যাত টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজকে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি’র উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করান গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে। এটা ছিল সর্বপ্রথম দেশের মাদকবাজ ও হুন্ডিবাজদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কৌতুহল, আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। এছাড়া এই নাছোড়বান্দার মধ্যস্থতায় মাসখানেকের মধ্যে আরো ১৫/১৭ জন ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া হতে পারে বলে সিবিএন-কে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছেন।
কুখ্যাত অপরাধীদের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফেরানোর নেশায় মগ্ন এম.এম আকরাম হোসাইনকে সম্বর্ধিত করা হয়েছে-নিজ জম্মস্থান পেকুয়াতেও। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল উপকূলের ‘শান্তির অগ্রদূত’ স্বীকৃতি পাওয়া সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইনকে সর্ম্বধিত করা হয়।

আনন্দ টিভি’র চট্টগ্রাম অফিস প্রধান এম.এম আকরাম হোসাইন তাঁকে প্রদত্ত বর্ষসেরা টিভি রিপোর্টার হিসাবে বিরল এই এওয়ার্ড প্রাপ্তির জবাবে বলেন-এ সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য আমি নই, মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ থেকে এ কঠিন মিশনের কাজ করছি। তাতে যখন সফল হই, তখন নিজে তৃপ্তি পায়। দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে একাজ করি বলে ঝুঁকির বিষয়টি কাজ করার সময় আর আমার মাথায় থাকেনা। তিনি তাঁকে প্রদত্ত এ বর্ষসেরা টিভি রিপোর্টিং এওয়ার্ডটি কক্সবাজার জেলাবাসীর নিকট উৎসর্গ করে তাঁর পেশাগত জীবনে সফলতার জন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।