মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেছেন, ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারী দেশে যখন ১/১১ সরকার আসে তখন আমি সেনাবাহিনীর চাকুরীতে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় কর্মরত ছিলাম। আলীকদম থেকে কক্সবাজার অপেক্ষাকৃত সন্নিকটে হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে কক্সবাজারের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলো। কক্সবাজার আমার জন্মভূমি। তাই কক্সবাজারে এসে ওয়ান ইলাভেন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডে হয়ত বিড়ম্বনায় পড়বেন, চাপে থাকবেন, বিতর্কিত কাজ করতে হবে ইত্যাদি চিন্তা করে কক্সবাজারে ফখরুদ্দিন, ইয়াজউদ্দিন ও মঈন উদ্দিন সরকারের কোন দায়িত্ব আমি সে সময় নিই নাই। তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য আমার নিয়ত ভাল ছিলো বলে আল্লাহতায়লার অসীম রহমতে এ বিভ্রতকর দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়নি।

কক্সবাজার শহরের এবিসি ঘোনা চেয়ারম্যান ঘাটায় কউক এর কক্সবাজার শহর আলোকায়ন প্রকল্প-৩ এর উদ্বোধন ও এলাকার মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে স্থানীয় লোকজনের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বুধবার ৪ ডিসেম্বর প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারবাসীকে সেবা দিতে এসেছি। এতে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। কক্সবাজারে আমার কোন জমি ও বাড়ি নেই। ভাড়া বাসায় থাকি। আপনাদের ভালোবাসা, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত থেকে এগিয়ে যেতে আমি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)কেও আমি সম্পূর্ণ দুর্নীতি মুক্ত রাখতে চায়। তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্য আরো বলেন, আপনারা কেউ কউকের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে কোন অবস্থাতেই কলুষিত করবেননা। কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ সমাজ থেকে মাদক সহ সব ধরনের অপরাধ দূর করার লক্ষ্যে সবার আগে নিজ নিজ মন মানসিকতার পরিবর্তনের আহবান জানিয়ে বলেন, সমৃদ্ধ, উন্নত, পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত কক্সবাজার শহর গড়ে তুলতে সবাইকে আরো সচেতন ও দেশপ্রেমিক হতে হবে। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে নিজে নৈতিকতা ও সঠিক অবস্থানে আছি কিনা সেটা আগে দেখতে হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ সবুজবাগ, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরা, সমিতিবাজার, বাঁচামিয়ার ঘোনা, টেকনাফ পাহাড়, আশুরঘোনা, সিকদার বাজার সহ কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব এলাকা উন্নয়নে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই এলাকাকে ইয়াবা ও সর্বপ্রকার মাদকমুক্ত করতে এবং এখানকার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সুপার ও র‍্যাবের সাথে আলাপ করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এলাকার জনপ্রতিনিধি, সমাজকমিটি, সর্বসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে অনেকদিন আগে তৈরি করা কক্সবাজারের মাষ্টারপ্ল্যান থেকে এ এলাকাকে প্রয়োজনে ‘ওপেন জোন’ থেকে বাদ দেওয়া হবে। এরপর এ এলাকার ভূমি ব্যবহারের অনুমতি ও বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বিধিসম্মতভাবে কউক থেকে প্ল্যান ডিজাইন পাশ করে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

কক্সবাজার পৌরসভার ৭ ওয়ার্ডের তিন তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামসেদের সভাপতিত্বে কক্সবাজার শহর কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি মিজানুর রহমানের নান্দনিক সঞ্চালনায় হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ এর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া মসজিদে বায়তুল্লাহ কমপ্লেক্স সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার, কউক এর উপ নগর পরিকল্পনাবিদ ও অথরাইজড অফিসার জাহাঙ্গীর আলী, এডভোকেট আবু সিদ্দিক ওসমানী, ডা. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. নুরুল আবছার, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন, মাওলানা শাহ আলম, সেলিম উল্লাহ সুজন, করিম উল্লাহ, আবদুস সালাম মেম্বার প্রমুখ। বিশাল এই মতবিনিময় সভা শেষে সকলকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কউক এর গৃহীত কার্যক্রম ও পরিকল্পনা দেখানো হয়। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদকে সরকার অতি সম্প্রতি যুগ্মসচিবের মর্যাদা প্রদান করায় মতবিনিময় সভার শুরুতে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন সমাজ কমিটি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়।