মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সিএসপি ও সরকারের এক সময়ের ডাকসাইটে সচিব একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক হাসনাত আবদুল হাই তাঁর শৈশব থেকে এ পর্যন্ত তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প শুনিয়েছেন কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডার হাসনাত আবদুল হাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়া থেকে শুরু করে আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, লন্ডনের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার গল্প যেন ছিলো ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এক রূপকথার কাহিনী। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া এই চৌকস কর্মকর্তা পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা দিয়ে জয় করে জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থর পর্যন্ত। জনপ্রশাসনের এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থর নেই যেখানে এই দক্ষ কর্মকর্তার পদচারণা ঘটেনি। ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণকারী কৃর্তিমান এই পুরুষ অধ্যাপনা দিয়েই তাঁর চাকুরী জীবন শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন। এই জীবন্ত কিংবদন্তির পুরো নাম হচ্ছে-আবুল হাসনাত মোঃ আবদুল হাই। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩ টি। তারমধ্যে সংকলিত সমগ্র ঔপন্যাস গ্রন্থ ২৩ টি, ভ্রমন কাহিনী ৬ টি ও অন্যান্য বিষয়ের গ্রন্থ ৪ টি। এগুলোর মধ্যে ৩ টি ইংরেজি ভাষায় ও বাকীগুলো বাংলা ভাষায়। আরো ৪ টি বইয়ের পান্ডুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। আবুল হাসনাত মোঃ আবদুল হাই ১৯৭৭ সালে সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার,১৯৯৩ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে শেরেবাংলা সাহিত্য পুরস্কার ও এস.এম সুলতান পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা ‘সুলতান’ গ্রন্থটি ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।

শিল্প সমালোচক, কলামিস্ট, বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক শাখায় যাঁর পদচারণা, বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব (সিএসপি) আবুল হাসানাত মোঃ আবদুল হাই বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ‘কক্সবাজার ডিসি কলেজ’ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি তাঁর শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা শুনিয়ে কক্সবাজার ডিসি কলেজ-এর শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের নেতৃত্ব দানের আহ্বান জানান। কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁর জীবনের গল্প শোনার সময় তাঁর অবাক বিস্ময়ে অপলক চোখে তাকিয়ে ছিলেন। মুগ্ধ ছিলেন সকলে। শিক্ষার্থীদের এসময় মনে হচ্ছিল, এ যেন শুধু মেধাবী নয়, মেধার খনি, শুধু কর্মজীবন নয়, যেন একটি সচিবালয়, শুধু সাহিত্য জীবন নয়, যেন সাহিত্যের এক বিশাল গ্রন্থগার, শুধু অধ্যাবসায় নয়, যেন সারজীবনটাই একটা বিদ্যাপীঠ। যা শোনে কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেরণা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ হয়। অনুপ্রাণিত হয়, ভবিষ্যত জীবন গড়তে। তারা খুঁজে পান একজন আদর্শ ও অনুকরণীয় মানুষকে।

এ দৃষ্টান্তযোগ্য বিশাল ব্যক্তিত্ববান মানুষটি ৮১ বছর বয়সে কক্সবাজার ডিসি কলেজ পরিদর্শনকালে সেখানে শিক্ষকগণের সাথে মত বিনিময় করেন।কক্সবাজার ডিসি কলেজ-এর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন-কক্সবাজার ডিসি কলেজ-এর প্রতিষ্ঠায় কলেজের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের অবিস্মরণীয় অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সাবেক সচিব আবুল হাসানাত মোঃ আবদুল হাই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের এ মহতী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

পরিদর্শনকালে তাঁর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক ও ডিসি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো: কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্সবাজার ডিসি কলেজ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোহা: শাজাহান আলি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আল আমিন পারভেজ প্রমুখ। অতিথিদের কক্সবাজার ডিসি কলেজে স্বাগত জানান কলেজের অধ্যক্ষ-মো: ইব্রাহিম হোসেন।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের পিতা মরহুম এডভোকেট রফিক উল্লাহ এই বিদগ্ধ গুনিজন সাবেক সচিব (সিএসপি) আবুল হাসানাত মোঃ আবদুল হাই এর ক্লাসমেট ছিলেন বলে জানান। পরে তিনি কক্সবাজার ডিসি কলেজে সবার সাথে এক ফটোসেশানে মিলিত হন।