মোহাম্মদ শফিক:
কক্সবাজার শহরে তৎকালীন পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসরদের হাতে প্রথম শহীদ হওয়া ডা.কবির আহম্মদের স্ত্রী বীরঙ্গনা আলমাছ খাতুনের খোঁজ নিলেন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। ৫ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে নিজ কার্যালয়ে আসলে তাকে অভ্যার্থনা জানান ডিসি। এসময় পাকবাহিনীর হাতে স্বামীর হত্যা ও নিজ পাশবিক নির্যাতনের সেই দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাআপ্লুত হয়ে কান্না করেন আলমাছ। পরে জেলা প্রশাসক তাকে শান্তনা দেন এবং তার শাররীক অবস্থা ও পরিবারের খোঁজখবর নেন। এছাড়া শহীদ পরিবারের মর্যদা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে আলমাছ খাতুন বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ মে দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন বিকালে পাকহানাদার বাহিনী তার স্বামী ডা. কবির আহম্মদকে ধরে নিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে ৪ বছর বয়সী শাহেনা আকতার ও ৯ মাসের ছেলে নাছির উদ্দিনকে নিয়ে ছুটে যান, কক্সবাজার শহরের পুরোনো সিভিল রেস্টহাউস পাকিস্তানি ক্যাম্পে। সেখানে স্বামীর সাথে দেখা করারতো দুরের কথা! কথাও বলতে দেয়নি হানাদার বাহিনী। বরং ওসময় তিনিও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। পরে কৌশলে নিজের জীবন ভিক্ষা পেলেও, বাঁচাতে পারেনি স্বামীর জীবন। স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার রা। সেই থেকে স্বামী হারানোর পর আয়ের আর কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাঁর। ছেলে-মেয়ে থাকলেও অভাবের সংসার। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে ৭১ বছর বয়সেও এখনো অসুস্থ শরির নিয়ে প্রতিদিন লাঠিতে ভর দিয়ে কুজো হয়ে সাগর পাড়ে ঝিনুক কুড়ান আলমাছ খাতুন। এগুলো মালা গেথে বিক্রি করেই চলে তার সংসার। এমননিক বয়স্ক ভাতাটুকুও জোটেনি তার ভাগ্যে। বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন আলমাছ খাতুন। অর্থাভাবে তার নুন্যনতম চিকিৎসা করানো কঠিন হচ্ছে তার। এখনো পায়নি শহীদ পরিবার ও বীরঙ্গনার মর্যদাও।

তিনি আরো জনান, তখন বঙ্গবন্ধু সমবেদনা পত্র আর অনুদানের ২হাজার টাকা ছাড়া ৪৬ বছরেও কিছু পাননি। শধুমাত্র বঙ্গবন্ধু’র দেওয়া সেই সমবেদনা পত্রটা ছাড়া আর কিছু নেই। ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁর। এখনো পর্যন্ত সোনার হরিনের মতো সংরক্ষন করে রেখেছেন সেই পত্রটি। বহুবার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁরা স্বীকৃতি ও সবধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ^াস দিলেও আজা-কাল কালক্ষেপণ করে এখনো কোন মর্যদা দেয়নি। তবে গতবছর এশিয়ান টিভিসহ অন্যান্য সংবাদ পত্রে প্রতিবেদন আসার পর সদর উপজেলা থেকে কিছু কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছিল তিনি। অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করে শহীদ পরিবারের মর্যদা ও বসবাসের জন্য একটি ভূমি বরাদ্দ পাবে, এবং স্বামী স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার ও তাদের দুসরদের ধারাবাহিকভাবে বিচার হবে বাংলার মাটিতে শেষ বয়সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটাই দাবী তাঁর।

খোঁন নিয়ে যানা যায়, বাহাত্তরেই পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সহানুভুতির চিটি আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল তেকে ২হাজার টাকা অনুদান সেই বছরেরই প্রায় পরিবারটি। ওই বছরেই প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতও পেয়েছিল আলমাছ খাতুন। সেই প্রথম আর সেই শেষবারের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছিল তিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার পরে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদপরিবারে প্রতি সরকার এতো সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও স্থানীয় মুক্তযোদ্ধাদের দায়সারাভাব ও আন্তরিকতার অভাবে এখনো ভাগ্যে জুটেনি কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বয়স্ক ভাতার কার্ডও।

কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: আলী জানান, শহীদ আলমাছ খাতুন এর স্বামী ডা. কবির আহম্মদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু পাগল একজন মানুষ। বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত ওষধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের (১২ মে) শুক্রবার রিক্সসা যোগে বাসায় যাওয়ার পথিমধ্যে পাকাহিনী তাকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বর্তমান কক্সবাজার শহরের পুরোনো সিভিল রেস্টহাউস পাকিস্তানি ক্যাম্পে। পরে তাঁর স্ত্রী আলমাছ খাতুন স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও পাশপিক নির্যাতন করে হানাদার বাহিনী। আলমাছ খাতুন যেন, বীরঙ্গনা ও শহীদ পরিবার স্বীকৃতিসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় তার কার্যক্রম চলছে”।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য সরকার সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতা হিসেবে কক্সবাজার শহরে পাকবিহিনীর হাতে প্রথম শহীদ ডা. কবির আহম্মদ এর স্ত্রী আলমাছ খাতুনকে একটি ঘর, আর্থীক অনুদানসহ সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে”।