মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চিংতু। পিতা-ফইচভ। নাইক্ষ্যংখালী, দক্ষিণ হ্নীলা, টেকনাফ, কক্সবাজার। রাখাইন সম্প্রদায়ের সদস্য। সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে একখন্ড জমি ভোগ করছেন। দলিল, খতিয়ান, স্বত্ব, দখল সবকিছু তার নামে বৈধ আছে। কিন্তু একই এলাকার মৃত নুর আহমদের পুত্র লোভী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনার উক্ত জমি উপর লোভ পড়ে যায়। চিতং এর নামে সরকার বিএস খতিয়ান ভূল বশত প্রকাশ করেছে ও সে জমি চিতং ও তার পূর্ব পুরুষেরা আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনাকে আগেই বিক্রি করে ফেলেছে মর্মে গ্রাউন্ড দেখিয়ে চিতং এর জমিখানা আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনা’র জমি বলে ঘোষণা পাওয়ার আবেদন জনিয়ে আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনা বাদী হয়ে টেকনাফ সহকারী জজ মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ২০১৩ সালে। যার নম্বর অপর মোকদ্দমা-১৭/২০১৩ ইংরেজি। মামলায় চিতং কে বিবাদী করা হয়।

মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে বাদীর দাখিলীয় দলিলপত্র পর্যালোচনা করার সময় আদালতের সহকারী জজ মোহাম্মদ জিয়াউল হকের কাছে বাদীর দাখিলকৃত ১৯৭৬ সালের ১ জুন তারিখে উখিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত ৭৩৯ নম্বর দলিলটি জাল দলিল বলে সন্দেহ হওয়ায় বিচারক রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট বালামটি তলব করেন। আদালতের বালাম তলবের প্রেক্ষিতে সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপার মকছুদ আহমদ উক্ত বালাম নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর টেকনাফ সহকারী জজ আদালতে হাজির হন। একইদিন বিবাদী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনার পক্ষের আইনজীবী এম.এন আলম আদালতে হাজিরা দেন।রেজিস্ট্রার অফিসের বালামে ২৭৮-২৮১ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, দলিলটির দাতা-চিম্ভু, পিতা-মইচু হিসাবে লেখা আছে। কিন্তু বিচারক মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে দাখিলকৃত দলিলে পিতার নামের স্থলে ঘষামাজা করে ‘মইচু’ শব্দের স্থলে ‘ম্রাফুরি’ শব্দ জাল করে লেখা হয়েছে। তখন আদালতে বাদী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনার পক্ষে হাজিরা দেওয়া আইনজীবী এডভোকেট এম.এন আলমকে আদালতে অনেক ডাকাডাকি করার পরও খোঁজে পাওয়া যায়নি। আদালত তখন বালাম নিয়ে আসা রেকর্ড কিপার মকছুদ আহমদের সাক্ষ্য গ্রহন করেন। আদালত মামলাটির সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখতে পান, দলিল জাল করে আদালতকে বিভ্রান্ত ও আদালতের সময় নষ্ট করে, বাদী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। তাই, সহকারী জজ মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাদীর দায়েরকরা মামলা ৫ হাজার জরিমানা সহ খারিজ করে দেন। বাদী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল দলিল তৈরী ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত ভাবে একই আদালতের ভারপ্রাপ্ত সেরেস্তাদার মোঃ শাহজাহান মিয়াকে বাদী হয়ে ফৌজদারী মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দেন। সহকারী জজ মোহাম্মদ জিয়াউল হক এর এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেরেস্তাদার মোহাম্মদ শাহজাহান বাদী হয়ে খারিজ করা অপর ১৭/২০১৩ নম্বর মামলার বাদী আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনার বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ্ এর আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলার ধারা সমুহ হলো-১৮৬০ সালের দন্ড বিধি-১৯৩/১৯৯/৪৬৫/৪৬৬ ও ৪৬৮। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ্ এর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি সিবিএন-কে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারী সহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

দলিল জাল করে আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দেওয়ানী মামলা বিশেষজ্ঞ এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন বলেছেন, এধরণের প্রতারণা করে মামলা দায়ের করা হলে অহেতুক আদালতের সময় নষ্ট ও আদালত বিভ্রান্ত হয়। নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়। তাই জালিয়ত ও প্রতারণাকারীদের ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা দরকার। তাহলেই আদালতে জালিয়তি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান ও প্রতারণা করার প্রবণতা কিছুটা হলেও রোধ হবে। এদিকে, জালিয়ত আজগর আলী প্রকাশ কালাসোনা’র অপর ১৭/২০১৩ নম্বর মামলায় নিয়োজিত আইনজীবী এডভোকেট এম.এন আলম থেকে এ বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ফোন ডাইরেক্টরিতে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।