ডেস্ক নিউজ:

কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে কানাডার ভিসা না দেওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। এই অসন্তোষের কথা কানাডা সরকারকে জানানোসহ এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান ভিসা না দেওয়ার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ছয়জন অবসারপ্রাপ্ত জেনারেল তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, কানাডার হাইকমিশন তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেয়নি।
পরে সংসদীয় কমিটির সপ্তম বৈঠকে কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভিসা ইস্যু না করার বিষয়ে ফরেন অফিস কনসালটেশন সভায় আলোচনার পাশাপাশি এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে গত ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির অষ্টম বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে’।
সংসদীয় কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত সদস্যদের জানান, কানাডা সরকার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় অনেকেই ভিসা পাচ্ছেন না। তবে হাইকমিশন থেকে ভিসা না দেওয়ার কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানানো হয় না।
এর জবাবে সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততা আছে বলেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, এই অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেন এবং এ বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনারকে একটি চিঠি দেবেন বলে জানান। এছাড়া কানাডার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি অন্যান্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল (অব.) ফারুক খান সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই ঘটনায় তারা কানাডার হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছিল। মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ‘আপনারা তো কোনও কারণ না দেখিয়ে ভিসা রিজেক্ট করতে পারেন না।’ জবাবে তারা বলেছে, তারা ভিসা রিজেক্ট করেনি। তারা বলেছে ‘তোমাদের ভিসা আন্ডার প্রসেস বা সময় লাগছে।’‘বিভিন্ন কারণে সময় লাগছে’ বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কানাডা বলেছে, ‘আমরা চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি ভিসা দিতে’।”
তিনি বলেন, ‘আর যতদূর আমি জানি, এরই মধ্যে একজন ভিসা পেয়েও গেছেন।’
কর্নেল (অব.) ফারুক খান আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডাকে এ-ও বলেছে, তাদের কোনও জিজ্ঞাসা থাকলে বা সন্দেহজনক কিছু থাকলে একে ওকে জিজ্ঞাসা না করে মন্ত্রণালয়ের কাছে করতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি কানাডার সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং আমাদের মনোভাব জানিয়েছি।’ এ ধরনের ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং কানাডাকে এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর ঢাকার কানাডীয় দূতাবাসকে এ ব্যাপারে ইমেইল দিয়েও তাৎক্ষণিকভাবে জবাব পাওয়া যায়নি।