বিবিসি বাংলা:

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাদক পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট চালুর প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মনে করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শুধু ভর্তি পরীক্ষাই নয়, বরং একটি মেডিকেল টেস্টও হওয়া উচিত যাতে দেখা হবে কোনো পরীক্ষার্থী মাদকাসক্ত কি-না।

অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষার সাথে থাকবে ডোপ টেস্টের বিধান।

কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে অনেকেই ছিলেন এবং তারাও মনে করেন মাদকের বিস্তার ঠেকাতে একটি ইতিবাচক ফল দেবে।

তিনি বলেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সময়েই এটা করা সম্ভব এবং এটির ব্যবস্থাপনাও খুব কঠিন কিছু হবে না।

“সরকারি চাকুরী, বিভিন্ন বাহিনীর চাকুরীতে লাখ লাখ কর্মীর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সম্ভব হবেনা কেনো?” তার প্রশ্ন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ।

এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৪৩টি। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতেও আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বুয়েটে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

এসব আসনের বিপরীতে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে।

ডোপ টেস্ট ইতোমধ্যেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে এবং তারা বলছে এ টেস্ট অব্যাহত থাকবেডোপ টেস্ট ইতোমধ্যেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে এবং তারা বলছে এ টেস্ট অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরুন নাহার মেঘলা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে বরং ভর্তির পরে, কেউ এগুলোতে অভ্যস্ত হলে, তার কাউন্সেলিং-এর মতো সুবিধা নিশ্চিত করা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

আরেকজন শিক্ষার্থী নমরতা তালুকদার অর্পা বলেন, ডোপ টেস্টটাই যেনো দরকার না হয় অর্থাৎ মাদক যেনো না পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

“এদেশে সব কিছু নিয়ে একটা অনিয়মের সুযোগ তৈরির চেষ্টা হয়। এখানেও দেখতে হবে যে ডোপ টেস্ট চালু করে তা দিয়ে যেনো ইচ্ছাকৃতভাবে কারও ক্ষতি করার সুযোগ না থাকে।”

তবে শামসুল হক টুকু, যিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলছেন, এটা এখন অনেক জায়গাতেই চালু হয়েছে।

“আমাদের নানা বাহিনীর চাকুরীতে এবং সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের সময় তো এটা দেখা হয়। এমনকি পরিবহন সেক্টরে গাড়ি চালকদের পর্যন্ত ডোপ টেস্ট করার কথা বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ যারা হবে তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি দৃষ্টি দেয়া দরকার বলেই তাদের মাদকের কাছ থেকে দূরে রাখতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিতে হবে।”

তিনি বলেন, কমিটি একটি প্রস্তাব দিয়েছে এখন এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে কিভাবে এটি করা সম্ভব সেটি ঠিক করতে পারেন।

উদাহরণ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর থেকেই তাদের ভর্তি কার্যক্রমে ডোপ টেস্ট চালু করেছে।

তবে তারা শুধু ভর্তির সময়েই নয় বরং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকেও এ টেস্টের আওতায় রাখবে বলে জানিয়েছে।

এজন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিকেল টিম এ কাজটি করবে।

গত ১২ই নভেম্বর থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডোপ টেস্টের কার্যক্রম শুরুর পর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শুধু প্রথম বর্ষই নয়, সব বর্ষের শিক্ষার্থীদেরই এই টেস্টের আওতায় রাখা হবে।

তিনি জানান ডোপ টেস্টে কারও রেজাল্ট পজিটিভ হলে অর্থাৎ মাদকাসক্ত বলে প্রমাণিত হলে তার পুনর্বাসনেও সহায়তা করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখনো এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ধারণা এলো কোথা থেকে:

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, তিনি প্রথমে এই টেস্ট প্রয়োগ করেছেন ২০১০ সালের ১৮ই এপ্রিল পাবনায় তার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে।

“সম্মেলনের নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের হাসপাতালে নিয়ে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করেছিলাম। কারণ নেতা যারা হবে তাদের সৎ ও সুস্থ হতে হবে। সেবার এই টেস্টে এক তৃতীয়াংশ পজিটিভ ধরা পড়েছিলো।”

তবে এর প্রভাব ব্যাপক হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবার কদিন আগে যুবলীগের সম্মেলনেও একই টেস্টের ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু একজনও পজিটিভ পাইনি।”

“অর্থাৎ বার্তাটি গেছে যে মাদক সেবন করে নেতা হওয়া যাবে না, পদ পদবী মিলবে না। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে এ ধরনের টেস্টের প্রভাব হবে অত্যন্ত ইতিবাচক,” বলছিলেন তিনি।