মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

১০ এপ্রিল ২০১৯ সাল, বৃহস্পতিবার। কক্সবাজার জেলায় মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্থরে কলেজ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে বিকেল ৩ টার দিকে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের আহবানে এবং তাঁর সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সূচনা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন কক্সবাজার জেলায় মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্থরে নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে উম্মুক্ত আলোচনা ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চান। সভায় উপস্থিত সকলে মানসম্মত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত পোষণ করে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ও কলেজের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। উপস্থিত সকলে নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মতবিনিময় সভায় সবার ধারণা ছিলো, প্রস্তাবিত কলেজটির নাম হয়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা তাঁর পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নামে অথবা তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলমের বড় ভাই শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি’র নামে অথবা মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো নামে অথবা গৌরবময় কোন স্থাপনার নামে অথবা কক্সবাজারের ঐতিহ্য ও সভ্যতার সাথে মিল রেখে নামকরণ করা হবে। মতবিনিময় সভার কয়েকদিন পর কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু করতে গেলেই একটা নাম অবশ্যই দরকার হয়ে পড়ে। সে উপলব্ধি হতে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন দূরদর্শী চিন্তা ও সার্বজনীন ধারণা থেকে প্রস্তাবিত কলেজটির একটি নাম দিলেন। নামটি হলো “কক্সবাজার ডিসি কলেজে”। নামটা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ও সমাদৃত হলো। কিন্তু কেউ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি নামটা কেন দেওয়া হলো।

এই নাম দিয়েই তিনি সব ঠিকঠাক করে রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ চলে গেলেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্র্যেট (এডিএম) মোহাঃ শাজাহান আলিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে এই কক্সবাজার ডিসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দিলেন। এই নাম দিয়েই কক্সবাজারের কৃতি সন্তান মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের তৎকালীন সচিব মোঃ শফিউল আলমকে প্রধান অতিথি হিসাবে রেখে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হলো। বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো শিক্ষক ও অন্যান্য স্টাফ নিয়োগের জন্য। কিন্তু নামকরণের বিষয়টা সবার মনে কৌতুহল রহস্যাবৃত রয়েই গেলো।

গত ১০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার ডিসি কলেজের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন থেকে কক্সবাজার ডিসি কলেজ নিয়ে কক্সবাজারের সর্বপ্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিবিএন-এ একটি সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। সে সাক্ষাৎকারে কলেজটির নামকরণ কেন “কক্সবাজার ডিসি কলেজ” করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে সেদিন বলেছিলেন-স্বল্পসময়ে একটি উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করা একটা দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সরকারি চাকুরীর সহজাত নিয়ম হচ্ছে, নিয়োগ, বদলি, পদন্নোতি, অবসর ইত্যাদি। আমিও সেই নিয়মের বাইরে নই। একসময় আমিও সে নিয়মের বাধ্য বাধকতার শেকলে বন্দী হয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনমতে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাবো। পেশাগত প্রয়োজনে আমি অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সম্মানিত জেলা প্রশাসক হয়ে যাঁরা কক্সবাজার আসবেন, তাঁরাও যাতে কলেজটির প্রতি সর্বোচ্চ সুদৃষ্টি রাখেন, এজন্য কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণ করা হয়েছে। কলেজের নামের সাথে ‘ডিসি’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। যাতে আগামীতে কক্সবাজারে আসা জেলা প্রশাসকগণ এ ধরনের নামের কারণে কলেজটার প্রতি উৎসাহ বোধ করেন, আগ্রহ দেখান। কলেজটির প্রতি যত্নশীল হন। তিনি সিবিএন-কে সে সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন, ডিসি (ডেপুটি কমিশনার) এটা ব্যক্তির নাম নয়, শুধু পদের নাম নয়, এটা একটা প্রতিষ্ঠানিক নাম। এজন্য নামের কারণে কলেজটির প্রতি সার্বজনীনভাবে আগ্রহ থাকবে। এছাড়া কলেজটির বিষয়ে কক্সবাজার জেলাবাসী যাতে সবসময়ই উৎসাহ ও আগ্রহ দেখান, সেজন্য শুধু ডিসি কলেজ নামকরণ নাকরে “কক্সবাজার ডিসি কলেজ” নামকরণ করা হয়েছে বলে তিনি একই সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছিলেন। সেই কক্সবাজার ডিসি কলেজ মাত্র ৭ মাসে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

এই কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণের সুফল থেকে এই সামঞ্জস্যতার ব্যাপ্তি ঘটেছে অনেক। ইতিমধ্যে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় উখিয়া উপজেলা প্রশাসন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালীতে প্রস্তাবিত কলেজটির নামকরণের জন্য বেশ কিছু নাম এসেছে। তারমধ্যে “পালংখালী ইউএনও কলেজ”, “উখিয়া ইউএনও কলেজ”, “পালংখালী কলেজ” অথবা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট গৌরবান্বিত বিষয়কে কেন্দ্র করে নামকরণ করা ইত্যাদি। উখিয়াতে “ইউএনও কলেজের” ধারণাটা এসেছে কক্সবাজার ডিসি কলেজর ধারণা থেকে। এছাড়াও একই চিন্তা ও ধারণা থেকে উখিয়া উপজেলায় চলমান ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম দেওয়া হয়েছে “ইউএনও কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট”। একইভাবে উখিয়ায় আয়োজনের প্রস্ততি চলছে “ইউএনও কাপ ওপেন ব্যাটমিন্টন টুর্নামেন্ট”। এসব কিছুই সার্বজনীনভাবে দেওয়া কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণের সুফল থেকেই হচ্ছে। এভাবে ক্রমান্বয়ে ব্যাপৃত হচ্ছে কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণের ধারণা।

কক্সবাজার ডিসি কলেজের নামকরণের বিষয়ে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকত সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণ নিঃসন্দেহে অনাগত সকল ডিসিকে প্রভাবিত করবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও তাঁর দপ্তরের সুনজর থাকবে সবসময়ই। কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু বলেন, সার্বজনীন নামকরণের জন্য এ কলেজটি সুপ্রতিষ্ঠিত হতে বেশী সময় লাগবেনা। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু আরো বলেন, কক্সবাজার ডিসি কলেজ কক্সবাজারবাসীর জন্য একটা বিশাল সম্পদ। এই সম্পদকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এই কলেজের সম্পৃক্ত হতে হবে। তাঁর মতে, এই কলেজ কক্সবাজারের মর্যাদা ও পরিচিতি আরো বাড়াবে। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এপিপি এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে মানসম্মত বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর পর্যায়ের কলেজের খুব অভাব ছিলো। কক্সবাজার ডিসি কলেজ দীর্ঘদিনের সে অভাব পূরণ করেছে। অত্যন্ত দূরদর্শী নামকরণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই জেলার প্রধান নির্বাহী ভবিষ্যতের ডিসি সাহেবেরা সহ সবাই এ কলেজটার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চেষ্টা করবে সবসময়। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবদুল খালেক নব প্রতিষ্ঠিত কলেজটির নাম কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণ করায় জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ নামটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে ও সার্বজনীনভাবে সমাদৃত হয়েছে। যা কলেজটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।