এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশুছাত্রীর ধর্ষক ও গাড়ি হেলফার জকরিয়ার দৃষ্ঠান্তমুলক বিচার ও ফাঁসির দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় ধর্ষনের শিকার শিশুছাত্রীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থানলাই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কতৃপক্ষ এ কর্মসুচীর আয়োজন করে। মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা ধর্ষক জকরিয়ার দৃষ্ঠান্তমুলক বিচার ও ফাঁসির দাবীতে নানা শ্লোগান দেয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সীতা রাণী দেবী, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুচ্ছফা, সহকারী শিক্ষক যথাক্রমে জয়হরি শংকর, মো. নূরুল্লাহ,জসিম উদ্দিন, নাজমা আক্তার, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সাবেক ইউপি সদস্য মাহামুদুল হক, লক্ষী রাণী দে, মো. এহেছান, ধর্ষিত শিশুছাত্রীর পিতা জিয়াউর রহমান, মাতা কহিনুর আক্তার মুন্নি, বদিউল আলম, নাসির উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, সুদেব দে, মহি উদ্দিন, মনিন্দ্র পাড়া এলাকার সমাজ সর্দার মোহাম্মদ পেটান, করিরাঘোনা মুসলিম পাড়া এলাকার সমাজ সর্দার মো. জলিল, শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো, জুবাইর, গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল করিম ও মো. আজিমসহ স্কুল সংলগ্ন এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গত ২৪ নভেম্বর স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইঘ্যারঘোনা এলাকায় গাড়ির হেলফার জকরিয়া কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হয় থানলাই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী। ধর্ষক জকরিয়া ওই এলাকার এমদাদ আহমদের ছেলে ও মহাসড়কে চলাচলরত শ্যামলী বাস গাড়ির হেলপার। এ ঘটনায় ধর্ষনের শিকার শিশুছাত্রীর মা কহিনুর আক্তার মুন্নি বাদী হয়ে ধর্ষক জকরিয়াকে একমাত্র আসামী করে ২৭ নভেম্বর চকরিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (৯) ১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় হারবাং পুলিশ ফাঁসির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলামকে। এদিকে মামলা দায়েরর পর পুলিশ ধর্ষক জকরিয়াকে গ্রেপ্তারে একাধিক অভিযান চালালেও এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ধর্ষনের শিকার শিশুছাত্রীর পিতা জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতিদিনের মতো গত ২৪ নভেম্বর রবিবার সকাল ১০টায় স্কুলে গিয়েছিলো তার শিশুকন্যা। এদিন বিকাল ৪টায় স্কুলছুটির পর বাড়ি ফিরছিলো সে। এ সময় হঠাৎ হারবাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইঘ্যারঘোনা এলাকার এমদাদ আহমদের ছেলে মোটর শ্রমিক জাকারিয়া তার মেয়েকে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মৎস্য প্রকল্পের পানি নিস্কাসনের ছরাখালের নির্জনস্থানে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরও মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোঁজি করে। কিন্তু কোথাও হদিস মেলেনি। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী মৎস্য খামারে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে আমার মেয়েকে চিকিৎসার জন্য চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রেফার করেন। ভিকটিমের পিতা অভিযোগ করেন, মৎস্য খামার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে আপোষরফার কথা বলে স্থাণীয় একটি প্রভাবশালী মহল বাঁধা প্রদান করে। কিন্তু তাদের বাঁধা উপেক্ষা করে আমরা মেয়েকে চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষনের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ধর্ষক জকরিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহার করে আপোষরফার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। তাদের অব্যাহত হুমকীর মুখে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, হারবাং ইউনিয়নের বাইঘ্যারঘোনা এলাকায় শিশুছাত্রী ধর্ষনের ঘটনায় ধর্ষনের শিকার শিশুছাত্রীর মা কহিনুর আক্তার মুন্নি বাদী হয়ে ধর্ষক জকরিয়াকে একমাত্র আসামী করে গত ২৭ নভেম্বর চকরিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (৯) ১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ধর্ষক জকরিয়াকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।