ডেস্ক নিউজ:

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আর কখনও কোনো হায়েনার দল বাংলাদেশের মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না। রক্ত চুষে খেতে পারবে না। যারা মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে তারা আর কখনও এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দলগুলো সৃষ্টি হয়েছে ষড়যন্ত্র করে। ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলগুলো গঠন করা হয়েছে। এই দলগুলো মাটি থেকে গড়ে ওঠেনি। কোনো বিরোধী দলে থেকেও গড়ে ওঠেনি। এ দলগুলো মানুষের কথা চিন্তা করে গড়ে ওঠেনি। মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের উপকার করা, এগুলো তারা বোঝে না।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কীসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে। আজ আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি, এটা অব্যাহত থাকবে। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ আমরা বিফলে যেতে দেব না। এই টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে। কারও ভোগবিলাসের জন্য নয়, কারও ভোগবিলাসের জন্য এই টাকা ব্যয় হবে না। কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবেন আর বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন আর যে সৎভাবে জীবনযাপন করবে সে সাদাসিধে জীবনযাপন করে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরায়ানি-পোলাও খাওয়া থেকে এবং কোনো নামিদামি ব্র্যান্ড পরার থেকে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক ভালো অনেক, অনেক সম্মানের।

তিনি বলেন, আসলে টাকা বানানো একটা রোগ। এটা একটা অসুস্থতার কারণ। একবার যে টাকা বানাতে থাকে তার শুধু টাকা বানাতে ইচ্ছে করে। ওই টাকার ফলে ছেলেমেয়ে বিপথে যাবে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে। সেটা তার দেখারও সময় নেই। শুধু টাকার পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই। এভাবে নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই সৎভাবে জীবনযাপন করা। সৎপথে থেকে যে কামাই করে চলবে সে সম্মানের সঙ্গে চলবে। সৎভাবে কামাই করে যে চলবে সে সমাজে সম্মান পাবে। দুর্নীতির টাকা লুটপাটের টাকা অবৈধ টাকা দিয়ে যতই সে বিলাসিতা করুক মানুষ মুখে হয়তো খুব বাহবা দেবে কিন্তু পেছনে গিয়ে একটা গালি দেবে। ওই বেটা দুর্নীতিবাজ চোর। সেই গালিটা হয়তো শোনা যাবে না কিন্তু বুঝতে পারবে। এভাবে তাকে গালিটা খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধা জীবনযাপন করেছেন। আমরা তার আদর্শের সৈনিক। আমাদের সেভাবেই চলতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে সবসময় এদেশের শ্রমিক কৃষক ও মেহনতী মানুষের কথা বলতেন। তাদের ভাগ্য আমরা কতটুকু বদল করতে পারি, কতটুকু করে দিতে পারি, এ দেশের মানুষের ভাগ্য আরও কীভাবে উন্নত করা যায সেই চিন্তা করছি। প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, আমরা সেটাই করতে চাই, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেইগুলো নিয়ে কাজ করেছি বলেই গত এক দশকে এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মান পাচ্ছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা যদি ওই রকম বিলাসবাসনায় ভাসাতাম তাহলে এই উন্নতি করা যেত না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতো না। এই বাংলাদেশে এত সম্মান পেত না। আওয়ামী লীগ আসার আগে তো এই সম্মান পায় নাই। আমরা ক্ষমতায় আসার পরই এই সম্মান পেয়েছে। এই সম্মানটা ধরে রাখতে হবে।

আগামী দিনের নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন তাদের এসব কথা মনে রাখতে হবে। অবশ্যই তাদের আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা রেখে গেছেন সেই ত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। আমাদের এই পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীতে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব। ৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। যে দেশ হবে সোনার বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সামনে আরও কর্মসূচি নিয়েছি ডেল্টা প্ল্যান ২১০০। শত বছরের প্ল্যান আমরা দিয়ে যাচ্ছি। এই বাংলাদেশ যেন আর কখনও পেছনে ফিরে না তাকায় দেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর এবং শান্তিময় জীবন গড়ে তুলতে পারে তারা যেন উন্নত জীবন পায় সুশৃঙ্খল জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পরিকল্পনা তৈরি করেছি এবং সে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা দেশের উন্নয়ন করা আর সেই কাজই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা চাই প্রতিটি নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশটি করে তুলবেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে আর কোনো হায়েনার দল এই বাংলার মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না।

এর আগে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেই প্রধান অতিথি জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আশরাফ উদাস ও শাহনাজ বাবু গান পরিবেশন করেন। সাইফুল ও তার দল নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন উত্তরের দফতর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল ও দক্ষিণের দফতর সম্পাদক গোলাম রব্বানী বাবলু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য রাখেন।