জাহাঙ্গীর আলম, ইনানী, উখিয়া

সকল ভ্রমণ প্রেমীদের অবকাশ যাপনের সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য স্থল হল সমুদ্র সৈকত। নাগরিক দৌঁড়-ঝাপে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন ছুট পেলেই সুনীল সাগরের জলে পা ভেজানোর সুযোগ কেইবা হাতছাড়া করে। সাগর পাড়ে নিবিড় প্রশান্তিতে অবকাশ যাপনের জন্য কক্সবাজারই সবার প্রথম পছন্দ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রিয় সৈকত হল ইনানী সমুদ্র সৈকত।

কোরাল পাথর ঘেরা অপূর্ব সৈকত এই ইনানী বীচে সমুদ্রের নীল জলরাশি আর সারি সারি পাথরের মেলা। পাথরগুলো একবার সমুদ্রের জলে ডুব দেয় আবার যেন ভেসে ওঠে দিনের কোন না কোন সময়ে পাথরের উপর দাঁড়ালে মনে হবে যেন সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে। সে এক অপার্থিব অনুভূতি। পাথরগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যের সৌন্দর্য কল্পনাকেও হার মানায়। গোধূলি বেলার রক্তিম আভা ও বীচের রঙ যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন চারপাশের সৌন্দর্য দেখে মনে হয় যেন মুঠো মুঠো সোনা ছড়িয়ে আছে পুরো সৈকত জুড়ে।

ইনানী সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ও হিমছড়ি থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাল গঠিত সমুদ্র ইনানীর অবস্থান। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ছোট বাস, অটোরিকশা, সিএনজি, বা জীপে করে চলে যেতে পারেন ইনানীতে। একটি জীপে ১০-১৫ জন যাওয়া যায়।

আপনি যদি টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানী সৈকতে যান তবে যাবার পথে আপনার দু’চোখ জুড়িয়ে দেবে উঁচু উঁচু পাহাড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। পুরো সময়টা আপনি থাকবেন এক ধরণের সুন্দর দোটানায় । এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে সাগর। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন। মন চাইবে দুপাশের সৌন্দর্য একসাথে দেখতে। ক্ষিপ্রগতিতে যখন জিপ ছুটে চলে খোলা জিপের উপর দাড়িয়ে দুপাশে তাকালে মনে হবে যেন স্বপ্নে দেশে ভেসে যাচ্ছেন। এটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। এরপর বেশ উঁচু একটা ব্রিজ পার হয়ে শুরু হবে হিমছড়ির রাস্তা। রাস্তার একপাশে থাকবে উঁচু পাহাড় আরেক পাশে সাগর। নানা রকম পাখির কলতান শুনতে শুনতে আপনি রোমাঞ্চিত হবেন। পাহাড়ে নানা রকম ঝোপঝাড়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র সৈকত পাড়ে দেখা যায় সুদূর ঝাউ গাছের সারি। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সৌন্দর্যের ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে। জায়গায় জায়গায় দেখবেন পাহাড়ি ছোট ছোট ঝরনা। শুকনা মৌসুমে হয়তো সবটাতে পানি দেখবেন না। রাস্তার ওপর পাশে সাগর। মাঝে মাঝে দেখবেন জেলে নৌকা বালির উপর সারি করে রাখা আছে।

সৈকতে পৌঁছে এর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেনই। এ সমুদ্র সৈকতটির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের। ইনানী সৈকতে দাঁড়িয়ে যে কেউ ভুল ভেবে বসতে পারেন এটিকে সেন্টমার্টিন ভেবে। চমৎকার ছিমছাম, নিরিবিলি। সাগর পাড়ে বালির উপর বিস্তীর্ণ জুড়ে ছড়িয়ে আছে শত শত বছরের পুরাতন পাথর। সাগরের ঢেউগুলো প্রবালের গায়ে আঘাত লেগে পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে। স্বচ্ছ জলের তলায় দেখা যায় বালুর স্তর। ভাগ্য ভাল হলে পেয়ে যেতে পারেন হরেক রকম মাছের ছুটোছুটি। এখানে স্বচ্ছ জলের বুকে জলকেলিতে মেতে উঠার মজাই আলাদা। এখানে বিস্তীর্ণ বালুকা বেলায় ছুটে বেড়ায় হাজারো লাল কাঁকড়ার দল। পড়ন্ত বিকেলে কাঁকড়াগুলো যেন অস্তগামী সূর্যকে বিদায় জানানোর জন্য ছোটাছুটি করে।
ইনানী যেতে হবে অবশ্যই জোয়ার ভাটার হিসেব করে। কেননা জোয়ারের সময় গেলে সৈকতের এসব প্রবাল পাথর দেখতে পাবেন না। তাই যেতে হবে ভাটার সময়। এক্ষেত্রে খুব সকাল সকাল যাওয়াটাই বেস্ট। ইনানী বীচের চার পাশে গড়ে উঠা পর্যটকদের জন্য তারকা মানের আবাসিক হোটেল রয়েল টিউলিপ সহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কটেজ, খাবার ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের সুবিধার্থে সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা হয়েছে ফ্রেশ ফ্রেশ সাগরের বিভিন্ন মাছ কাঁকড়া পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার লবস্টার। এদিকে ইনানী বীচ ক্যাফেতে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য পর্যটক দুপুরের লাঞ্চ করছেন ইনানী বীচ ক্যাফেতে তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান কম খরচে ঘোড়ার জন্য ইনানী যথেষ্ট কক্সবাজারে অসংখ্য পর্যটন স্পর্ট আছে কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি পর্যটক ঘুরতে আসে কক্সবাজারের ইনানীতে। কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কোন অসুস্থ মানুষ যদি একবার কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ঘুরে আসে তাহলে সুস্থ হয়ে যাবে এত সুন্দর কক্সবাজার ইনানী বীচ। ঢাকা মিরপুর থেকে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে আসা আরিফ জানান আমরা প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের কোন না কোন পর্যটন স্পটে ঘুরতে যাই কিন্তু ইনানীর বীচের মতো সুন্দর প্রাকৃতি দিয়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশ কোথাও নেই এজন্য এবারে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে এসে অনেক আনন্দ লাগতেছে আমেরিকা প্রবাসী সুমি জানান আমি প্রথম মা-বাবার সাথে ঘুরতে কক্সবাজার ইনানীতে এসে খুব ইনজয় করছি আমাদের কক্সবাজার এত সুন্দর আগে জানতাম না।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইনানী বীচে পর্যটকদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোলার লাইটিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা খুব শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে।