বিবিসি বাংলা:

২০১৬ সালের ১লা জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার।

সন্ধ্যারাতে হঠাৎ করে খবর আসে গুলশানে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে’ পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেল এক রেস্টুরেন্টে সশস্ত্র হামলাকারী ঢুকে বেশ ক’জনকে জিম্মিও করেছে।

কিন্তু ঘটনাটা আসলে কী? গুজব নাকি সত্য – সেটি নিশ্চিত হতেও ঘন্টাখানেক সময় চলে গেল।

পরে জানা গেল হামলাকারীরা ওই রেস্টুরেন্টে থাকা বিদেশী নাগরিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে।

সন্ত্রাসী হামলার এক বছর পর হোলি আর্টিজান বেকারিতে নিহতদের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া শোক অনুষ্ঠান।সন্ত্রাসী হামলার এক বছর পর হোলি আর্টিজান বেকারিতে নিহতদের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া শোক অনুষ্ঠান।

এক পর্যায়ে জানা যায় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে।

গুলশানের একজন বাসিন্দা রাশিলা রহিম গোলাগুলির ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে।

“আমাকে আমার ড্রাইভার বললেন, আপা আপনি এখন বেরুবেন না, নীচে গোলাগুলি চলছে। তারপর দেখি আমার ড্রয়িং রুমের জানালার কাঁচ ফেটে গেল। তারপর থেকে অনবরত গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর আমার মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। আমরা সবাই কান্নাকাটি শুরু করি। কারণ খুবই আতঙ্কজনক একটা পরিস্থিতি।”

জিম্মি সংকটের ঘটনায় ১লা জুলাই সন্ধ্যারাত থেকে দিবাগত সারারাত অর্থাৎ ২রা জুলাই সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের নজর ছিল ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারির দিকে।

রাত ৯টা ৫ মিনিট: গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হামলার খবর পায় পুলিশ। গুলশানের পুলিশের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার আশরাফুল করিম জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

রাত ৯টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক এ’সময় টুইট করেন “পুলিশ ইজ সারাউন্ডিং দ্য এরিয়া, গানফায়ার স্টিল অন”।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

রাত ১০টার দিকে পুলিশ, র‍্যাব এবং আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের কয়েকশো সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেয়।

গণমাধ্যম কর্মীরাও ৭৯ নং রোডের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নেন।

রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন।

 

গুলশানে হামলার পর ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা 'আমাক' এ পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে।গুলশানে হামলার পর ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এ পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে।

রাত চারটা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আইএসের দায় স্বীকার:

রাতেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত ‘আমাক’এ গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে ২০জন নিহত হবার কথা জানায়।

আইএস এর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

রা জুলাই অভিযানের ঘটনাক্রম:

সকাল ৭টা ৩০ মিনিট: রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

৭টা ৪৫ মিনিট: কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

সকাল সোয়া ৮টায় রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশী নাগরিক তাঁর মোবাইল ফোনে সেটি ধারণ করেন।

৮টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা।

৯টা ১৫ মিনিটে অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।

সকাল ১০টায় ৪ জন বিদেশীসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মৃতদেহ পাবার কথা পুলিশ জানায়।

১১টা ৫০ মিনিট: অভিযানে জঙ্গিদের ৬ জন নিহত এবং একজন ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গুলশানে প্রায় বারো ঘন্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে সকালে এক কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে।গুলশানে প্রায় বারো ঘন্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে সকালে এক কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আইএসপিআর থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয় রেস্টুরেন্ট থেকে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম:

বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মত এই ধরনের নৃশংস হামলা দেখে। খবরের শিরোনাম হয় বিশ্বব্যাপী।

দেশি, বিদেশি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে খবরের প্রধান শিরোনাম, আলোচনার বিষয় হয় গুলশান হামলার ঘটনা।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা টেলিগ্রাফের ২রা জুলাই এর শিরোনাম ছিল- “20 hostages killed in ‘Isil’ attack on Dhaka restaurant popular with foreigners”।

দ্যা ইকোনোমিক টাইমস ২রা জুলাই ভোরের দিকে শিরোনাম করে- “ISIS gunmen take hostages at Dhaka eatery; 2 policemen killed”।

হামলার দিন রাতে পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা হলি আর্টিজান বেকারির সামনে অবস্থান নেয়।হামলার দিন রাতে পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা হলি আর্টিজান বেকারির সামনে অবস্থান নেয়।

দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর শিরোনাম ছিল – “After Slaughter, Bangladesh Reels at Revelations About Attackers” এভাবে দেশ বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে পরবর্তী কয়েক দিন খবর ছিল বাংলাদেশের গুলশানে ক্যাফেতে হামলার ঘটনা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান:

গুলশান হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। যার সাথে সম্ভবত দেশের কেউ পরিচিত ছিলো না।

বাংলাদেশ সরকারও-জঙ্গি নির্মূলে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ, নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা করা এবং জঙ্গি সন্দেহে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়।

হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে আগের চাইতে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও ঢেলে সাজানো হয় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে আসছে।

ঢাকাসহ সারাদেশে জঙ্গিদের মোকাবেলায় ব্যাপক অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, তিন বছরে অব্যাহত জঙ্গি বিরোধী অভিযানে ৮০জন নিহত এবং তিনশ’র বেশি গ্রেফতার হয়।

শোলাকিয়ায় হামলা:

হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলার ছয়দিন পর জঙ্গিরা হামলার চেষ্টা করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।

সেদিন ৭ই জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে আজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিতে বোমা ও চাপাতি হামলা চালায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা।

দুপুর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের মধ্যে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলে।

এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের দুই কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক এবং স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক।

হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হন আবির রহমান নামের একজন। আহত অবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ইসলাম নামে আরেকজনকে।

পরে শফিউল র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নান্দাইলের ডাংরী এলাকায় মারা যান। ঘটনার তিন দিন পর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

ঘটনার পর শোলাকিয়া ও ঢাকার হোলি আর্টিজান হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

হোলি আর্টিজানে হামলার মামলায় মোট আসামি ছিলেন ২৪ জন। তাদের মধ্যে ১৯ জন বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তাদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, হোলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলা একই সূত্রে গাঁথা। শোলাকিয়া মাঠের ইমাম ও মুসল্লিদের হত্যা করাই ছিল এ হামলার মূল উদ্দেশ্য।

অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স

অভিযানের সময় আতিয়া মহলের পূর্বপাশঅভিযানের সময় আতিয়া মহলের পূর্বপাশ

২০১৬ সালের ২৬শে জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে ৯ জন জঙ্গি নিহত হয়।

পুলিশ ধারণা করছিল, নিহতরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের সদস্য।

ওই অভিযানের পর তৎকালীন পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল জানান, গুলশানের হামলাকারীদের সাথে কল্যাণপুরে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের মিল রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহমেদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে সারারাত ধরে গোলাগুলি চলে।

তিনি জানান, মধ্যরাতে পুলিশ একটি নিয়মিত রেইডে বের হলে তারা হঠাৎ আক্রমণের শিকার হন। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুঁড়লে তারা কল্যাণপুরের ঐ বাড়িটি থেকে পুলিশের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে।

জঙ্গিরা হাতবোমা ও গ্রেনেডও ছুঁড়েছে বলে জানান মাসুদ আহমেদ।

রাতেই কল্যাণপুরে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট ও আশপাশের সবগুলো থানা থেকে পুলিশ এসে যোগ দেয়।

ভোর সাড়ে পাঁচটার সামান্য পরে সোয়াটসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা অভিযান শুরু করে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন স্টর্ম টুয়েন্টি সিক্স’।

‘অপারেশন টোয়াইলাইট’

২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে বড় অভিযানটি করে সিলেটের আতিয়া মহলে।

‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলার সময় ঐ ভবনে বহু বিস্ফোরণ ঘটে এবং ব্যাপক গোলাগুলি চলে।

অভিযান চলার সময় এবং পরে ১১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল । অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর আগের ঘটনা সম্পর্কে তখন ব্রিগেডিয়ার ফখরুল আবেদিন বলেন, “গত ২৪শে মার্চ রাত দেড়টার দিকে পুলিশ সদস্যরা সিলেটের শিববাড়ির পাঠানপাড়া সড়কের পাশের আতিয়া মহলটি ঘিরে ফেলে।

রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা নিশ্চিত হন আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে। পুলিশ সদস্যরা তখন আতিয়া মহলের নিচতলার ছয়টি কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় এবং ভবনের মূল প্রবেশ পথের কলাপসিবল গেইটে তালা লাগিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে।

এসময় পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। তখন জঙ্গিদের দক্ষতা ও আটাশটি পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশেষায়িত বাহিনী ‘সোয়াটে’র সহায়তা কামনা করে সিলেট পুলিশ।

আতিয়া মহলে অভিযান চালাতে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ব্যবহার করেছে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম।আতিয়া মহলে অভিযান চালাতে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ব্যবহার করেছে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম।

এই অভিযানটি ৫ দিন ধরে চলে। নিহত হয় সন্দেহভাজন চার জঙ্গি।

২৫শে মার্চ ২০১৭ সালে আতিয়া মহল থেকে ২০০ গজ দূরে আতিয়া মহলের বাইরে জঙ্গিদের বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন।

সে ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন র‍্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ।

গত তিন বছরে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, গাজীপুরসহ দেশের নানা স্থানে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইসিস, নব্য জেএমবি বিতর্ক

বাংলাদেশে কয়েকটি হামলার দায় নেয় ইসলামিক স্টেট ।

কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সব সময় সেটা অস্বীকার করে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ হামলাকারীদের নব্য জেএমবির সদস্য বলে দাবি করেছে।

র‍্যাব এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন এমন ব্যক্তিদের অনেকে বলেছেন সরাসরি ইলসামিক স্টেট না হলেও তাদের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কাজ করে থাকতে পারে।

তবে আইসিসের দায় স্বীকার করার পর বিশ্ব মিডিয়ার খবর হয়েছে প্রতিবার।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কতটা ধাক্কা ছিল?

বাংলাদেশের ইতিহাসে হোলি আর্টিজানে হামলাকেই জঙ্গিদের চালানো সবচেয়ে বড় হামলা বলে বিবেচনা করা হয়।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম হোলি আর্টিজান হামলার তিন বছর পূর্তিতে ১লা জুলাই ২০১৯ বলেছেন, জঙ্গিরা এখন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লেও ছোট ছোট গ্রুপে তারা তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। ফলে পরিস্থিতি উদ্বেগের না হলেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

জঙ্গিদের দমনের পাশাপাশি ধরণের মতাদর্শভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে পুরোপুরি অস্তিত্বহীন করতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার কথাও জানান তিনি।

মি. ইসলাম বলেন, “জঙ্গিরা ধর্মের যে অপব্যাখ্যা ছড়াচ্ছে, তার বিপরীতে আলেম ওলামারা সঠিক ব্যাখ্যা সম্বলিত বই পুস্তক লিখছে। পাশাপাশি আমরা তাদেরকে নিয়ে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করারও চেষ্টা করছি। তাদেরকে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছি।”

গুলশান হামলার চার্জশিট:

দু’বছর পর আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

মামলার তদন্তে ঘটনার সাথে মোট ২১ জন জড়িত ছিলো বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ এবং এর মধ্যে ঘটনার দিন ও পরে ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তবে এতে হামলার ঘটনার পর আটক হওয়া ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

পুলিশের অভিযানে ৩১ জন আটকপুলিশের অভিযানে ৩১ জন আটক

তিনি জানান, ওই ঘটনায় মোট ২১ জনের মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে আরও আটজন।

তাই চার্জশিটে আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন রাকিবুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, মামুনুর রশীদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালেদ।

এর মধ্যে মামুনুর রশীদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালেদকে এখনো আটক করা যায়নি।

অন্য অভিযানে নিহত আটজন হলেন: তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান, তানভীর কাদেরী, তারেক রায়হান ও ছোটো রায়হান।

হলি আর্টিজানে যারা নিহত: রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, সামিউল মোবাশ্বির, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও নিবরাস ইসলাম।