মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে শিশু, কিশোর ও যুবকদের কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।  একইসাথে ইউনিসেফ ও বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত রোহিঙ্গা শিশু কিশোর শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মিত বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফ উপজেলায় মোট ৩২ টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে শিশু ও কিশোরদের শিক্ষা দেয়ার জন্য কিছু অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা কেন্দ্রে শুধুমাত্র বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কোন অবস্থাতেই এসব শিক্ষা কেন্দ্রে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়া ও দেশের জাতীয় সিলেবাস মতে পাঠদান করা যাবেনা মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। এসব শর্ত মেনেই ক্যাম্পে শিক্ষা কেন্দ্র গুলো খোলা হয়েছে। শর্ত লঙ্গন করলে শিক্ষা কেন্দ্র গুলো বন্ধ করা সহ লঙ্গনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিও রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অনানুষ্ঠানিক শিশু কিশোর শিক্ষা কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব অনানুষ্ঠানিক শিশু কিশোর শিক্ষাকেন্দ্রে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষা কেন্দ্রে গুলোতে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা গ্রহন করে রোহিঙ্গা শিশু কিশোরেরা সরকারের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি হয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। একই সাথে এসব শিক্ষা কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্যারাতে, আপদকালীন সংকটে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ভয়ংকর শরীরীক কসরত শেখানো হচ্ছে।

আরো অভিযোগ উঠেছে, মায়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রিত ‘সিপিআই’ নামক একটি বিতর্কিত এনজিও শিশু কিশোরদের কারাতে ও যুদ্ধাংদেহী কসরত শেখাচ্ছে। অথচ সিপিআই নামক এনজিও-টির রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করার সরকারি কোন অনুমতি নেই। অনুমতিপ্রাপ্ত অন্যান্য এনজিও’র সহযোগী সংস্থা হিসাবে বিতর্কিত এনজিও সিপিআই রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করছে বলে জানা গেছে। কারাতে প্রশিক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণের সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট একটি এনজিও’র কর্মকর্তা সিবিএন-কে জানান, নাটক, ফ্লিম ও ছোটগল্প তৈরীর জন্য এগুলো রিহার্সাল দেওয়া হচ্ছে।  সেখানে দা, ছুরি, দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে উক্ত এনজিও কর্মকর্তা জানান, ফ্লিম নির্মাতারা গল্পের প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করছে বলে মনে হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী নিয়ে কাজ করেন এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকতা সিবিএন-কে বলেন, ক্যারাতে ও যুদ্ধাংদেহী কসরত শিখে রোহিঙ্গা শিশু কিশোরেরা আরাকানের বিদ্রোহী সংগঠন গুলোতে যোগ দেওয়ার আশংকা রয়েছে। বিভিন্ন সংকটে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সরকারের বিরুদ্ধেও তারা ব্যবহার হতে পারে। তাঁর মতে, সুযোগ পেলে তারা দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন গুলোতে যোগ দেওয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

এদিকে, উখিয়া উপজেলার সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী আছে কিনা, তা যাচাই বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলামকে আহবায়ক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উখিয়ার ইউএনও প্রকৌশলী মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন সিবিএন-কে জানিয়েছেন। তিনি জানান, গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে তাদের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন।

রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে শিশু কিশোর শিক্ষা কেন্দ্র গুলোতে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া এবং বিকেলও রাতে ক্যারাতে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আরআরআরসি মোঃ মাহবুবুল আলম তালুকদার সিবিএন-কে বলেন, ক্যারাতে ও বাংলা ভাষা শিক্ষা কোন ক্যাম্পে দেওয়া হচ্ছে, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরো নজরদারি বাড়াবেন বলে সিবিএন-কে আরআরআরসি মোঃ মাহবুবুল আলম তালুকদার জানিয়েছেন।