মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ইউরোপের দেশ মোনাকো’তে গত ১৩-১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩ দেশীয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক জোন ফোরাম (FEMOZA) আয়োজিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল সামিটে বাংলাদেশ FEMOZA এওয়ার্ড অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ FEMOZA কর্তৃক বাংলাদেশ’কে এই বিরল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। মোনাকো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক জোন সামিটে যোগ দিয়ে আসা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন রোববার ২৪ নভেম্বর সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিদলের নেতা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী (সচিব) সহ সামিটে অংশগ্রহণকারী সকলে একসাথে এই গুরুত্বপূর্ণ এওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন গর্বের সাথে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক জোন ফোরাম (FEMOZA) আয়োজিত ২৩ দেশীয় এই সামিটে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে র‍্যাঙ্কিং এ শীর্ষে রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। তিনি দিন ব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সামিটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের সচিত্র কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক এই সামিটে অংশগ্রহণকারী কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে আরো জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে সামিটে অংশ নেয়া অন্য ২২ টি দেশের প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সামিটে ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহকে রোল মডেল হিসাবে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভার FEMOZA এর সদর দপ্তরের উদ্যোগে ‘ফাস্ট ফ্রী স্পেশাল জোন জোনস ওয়ার্ল্ড, মোনাকো-২০১৯, ২৩ দেশীয় সামিটে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ও সামিটে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য গুলশান আরা সিবিএন-কে জানিয়েছেন।

মোনাকো’র এ সামিটে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সফলভাবে অংশগ্রহণের পর নভেম্বরের ১৬ ও ১৭ তারিখ এই প্রতিনিধিদল ফ্রান্সের প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহে বিনিয়োগ করার জন্য আহবান জানান। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ কমিউনিটি ও সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহে বিনিয়োগের জন্য বিরাজমান সুষ্ঠু, সুন্দর ও অনুকূল পরিবেশ, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস সরবরাহের প্রাচুর্যতা, আমদানি-রপ্তানী সুবিধা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা, সংরক্ষিত এলাকা, প্রশাসনিক সেবা পেতে দ্রুততা, স্বল্প ব্যয়ে শ্রমিক পাওয়া ইত্যাদি বিষয় তাদের কাছে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে এসব সুবিধাদির কথা জেনে এদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহে বিনিয়োগ বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেন। সেখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটি ও ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফর করবেন প্রতিনিধিদলকে জানান।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ‘ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রোগ্রাম’ এর আওতায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদলটি নভেম্বরের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সফরের তৃতীয় দেশ তুরস্কের ইস্তাম্বুল সফর করেন। প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) গুলশান আরা সিবিএন-কে জানান, তুরস্কের পোস্তা শহরে প্রায় ৫৮ বছর পূর্বে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ তাঁরা পরিদর্শন করেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল পোস্তা অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। পোস্তা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে অপেক্ষাকৃত কম বেতনে স্কীলড শ্রমিক নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল পোস্তা অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে বলেন, যে শ্রমিক এখানে ৪শ’ ইউএস ডলারে শ্রম দিচ্ছে, একই শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে মাত্র একশ’ ইউএস ডলারের বিনিময়ে আনা যাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রস্তাবে তুরস্কের পোস্তা অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভিজ্ঞতা বিনিময় সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশ পরস্পরকে জানতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের ত্রীদেশ সফরের এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন, বেজা’র চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী (সচিব) প্রতিনিধিদলনেতা, বেজা’র এক্সিকিউটিভ মেম্বার (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হারুনর রশিদ, বেজা’র মহাপরিচালক (যুগ্ন সচিব) মোহাম্মদ সোহেলের রহমান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) গুলশান আরা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, বেজা’র ওএসএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বেজা’র এসটিসিবি’র ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মোঃ হামিদুল ইসলাম ও বেজা’র গণসংযোগ কর্মকর্তা সেনজুতি বড়ুয়া।

ত্রিদেশে এ গুরুত্বপূর্ণ সফরের পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় এ সফর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে সিবিএন-কে বলেন-এ সফর ছিলো একটা সময়োপযোগী এবং অতি প্রয়োজনীয় সফর। বেজা’র প্রতিনিধিদলের এ সফরের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহে বিশেষ করে কক্সবাজারের মহেশখালী ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বিদেশি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আসবে নিশ্চিন্তে ও নির্ভয়ে। ফলে কক্সবাজার হবে এদেশের ‘ইকোনমিক গেটওয়ে’ এবং বিশ্বব্যাপী কক্সবাজারের পরিচিতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। এরফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ব্যবসা- বাণিজ্য প্রসার সহ বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। বৃদ্ধি পাবে এ এলাকার মর্যাদা ও সার্বিক ভাবমূর্তি।