সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহঃ

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী তলিয়াঘোনা থেকে মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে লবনাক্ত বালি উত্তোলন করছে একটি চক্র।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে বালি উত্তোলন করলেও সংশ্লিষ্টরা দেখেও না দেখার ভান করছেন।
এ ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন এটি সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ না জানলেও অবৈধ বালি উত্তোলন খুটাখালির মানুষের কাছে ‘ওপেন সিক্রেটে’ পরিনত হয়েছে। এ নিয়ে এলাকা জুড়ে হৈচৈ চলছে।
একই স্থান থেকে বালি তোলার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা ধরনের কানাঘুষা।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডবাসীর পক্ষে প্রশাসন বরাবর লিখিত একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু তারপরেও দেদারছে এই এলাকা থেকে লবনাক্ত বালি উত্তোলন চলছেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধভাবে লবনাক্ত বালি উত্তোলনের ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ও ৪ নং ওয়ার্ডের বিরাট একটি অংশ।
যে অংশে রয়েছে শত শত জনবসতি।
সরকারি- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক উপসড়ক।
এসব এলাকায় রয়েছে হাজার হাজার মানুষের চলাচল।
যার কারনে তলিয়াঘোনা থেকে রাতদিন বালি উত্তোলন কিছুতেই মানতে পারছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বালুর মেশিনের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে পড়ছে এলাকাবাসীর। প্রকৃতির ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। এ স্থান থেকে বালু ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলে নষ্ট হচ্ছে সড়ক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন মেদাকচ্ছপিয়া তলিয়াঘোনা থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সে বালু ডাম্পারের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। যার মদদে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালিরা।
তবে জড়িতরা দাবি করেন সরকারি কাজে বালি উত্তোলনে আমাদের অনুমতি আছে। আমরা বৈধভাবেই এ কাজ করছি।
অবৈধ বালি উত্তোলনে জড়িতরা বলেন, আমরা একই জায়গা থেকে বালি উত্তোলন করছি না। বিভিন্ন এলাকা থেকে বালি তুলছি। অতি উৎসাহী কিছু মানুষ এ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তাদের এ কথা মানতে নারাজ ইউনিয়নের মেদাকচ্ছপিয়া ও গর্জনতলিবাসী।
তাদের দাবি একই স্থান থেকে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন করে ডাম্পার করে পাচার করায় এলাকার চলাচল সড়কের বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে
তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেই বালি তুলুক আর যে কারনেই বালি তুলুক না কেন এতে করে এলাকার মানুষের চরম ক্ষতি হচ্ছে। এতে চলাচল সড়ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। এলাকায় শব্দ দূষণ হচ্ছে।
ভবিষ্যতের জন্য এটা হুমকির কারন হতে পারে।
সরকারি কাজে অবৈধভাবে বালি তুলতে হবে এটা ঠিক নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ইউনিয়নের গর্জনতলীর বাসিন্দারা জানায়, ইউনিয়নের তলিয়াঘোনা থেকে লবণাক্ত বালি উত্তোলন করে ভাল বালি মিশেয়ে পাচার করা হচ্ছে।
বালি গুলো বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করার জন্য অবৈধ ট্রাকের মাধ্যমে পাচার করায় ৪নং ওয়াডের গ্রামীণ ব্যাংকের রাস্তার মাথা থেকে মধ্যম মেধাকচ্ছপিয়া পর্যন্ত চলাচল রাস্তার বেহাল দশা হয়েছে।
কারণ লোক চলাচলের রাস্তায় ঝুকিপূর্ণ বালির গাড়ি চলাচলের কারনে, স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছেনা।
বালি ব্যবসায়ীরা রাতদিন সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লবণাক্ত বালির ট্রাক।
এতে করে ইউনিয়নের ৪,৩,২ ও ১নং ওয়াডের মানুষ নানা সমস্যায় সম্মুক্ষিণ হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, বালির ট্রাক চলাচল না করার জন্য ট্রাক মালিক কতৃপক্ষকে বলা হলেও তারা কোনো কর্নপাত করছেনা।
এসব অবৈধ বালির ট্রাকের মালিক জনৈক হুমায়ন।
তারই নির্দেশে রাতদিন চলছে অবৈধ বালির ডাম্পার।
হুমায়ুনের কাজে বাঁধা দিলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে নানা হুমকি।
তারা এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনমান রক্ষায় চকরিয়া থানার ওসি, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর উদ্দীন মু. শিবলী নোমান বলেন, কে বা কারা বালি উত্তোলন করছে সেটা আমার জানা নেই।
এ কাজ সম্পূর্ন অবৈধ। কেউ প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি। এটা একটি স্বেচ্ছাচারিতা।
যদি এর সাথে শক্তিশালী কোন মহল জড়িত থাকে তাহলে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।