জাফর আলম জুয়েল, ঈদগড় :

কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড়- বাইশারী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারী কাঠ। স্থানীয় বনবিটের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতি রাতেই পাচার হয় এসব কাঠ। কাঠ পাচারে প্রতিরাতে অবৈধ লেনদেন হয় হাজার হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে মাসোহারা পেয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে ঈদগড় বনবিভাগ ও পুলিশ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পুলিশ, বনবিভাগ এবং স্হানীয় কাঠ চোর সিন্ডিকেট ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয় উল্লেখিত সড়ক দিয়ে। পাচারের জন্য অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও দেখা দিয়েছে শংকা।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগড় বন চেকপোস্টে বিটের বনপ্রহরীদের দায়িত্বকালে ট্রাক, ড্যাম্পার ভর্তি ব্যাপক কাঠ পাচার হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে চাইলে তারা বিট অফিসারদের নিয়ন্ত্রনে সমস্ত কাঠ পাচার হয় বলে জানান। অন্যদিকে কাঠ পাচারে লিপ্ত সেন্ডিকেটের সদস্যদের নিকট জানতে চাইলে তারা কোন ধরণের তথ্য দিতে নারাজ। বর্তমানে প্রায় রাতেই তার ড্যাম্পার যোগে গামারী, গর্জন গাছসহ আরো নানা প্রজাতির বনাঞ্চলের কাঠ নিয়মিত পাচার হচ্ছে।
জানা যায়, স্থানীয় সবাইকে ম্যানেজ করে এ কাঠ পাচার ব্যবসা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাঠ পাচার রোধ করার জন্য কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনস্থ রয়েছে বাইশারী বনবিট, তুলাতুলি বনবিট, ঈদগড় বনবিট, ঈদগড় রেঞ্জ, ভোমরিয়াঘোনা বনবিট ও ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ অফিস।
উল্লেখিত অফিসগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রেঞ্জ ও বনবিটের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এতদঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়নের পরিবর্তে নিধনযজ্ঞ, সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন এবং সংরক্ষণের পরিবর্তে নিধন মহোৎসবে নেমে পড়েছে। পাশাপাশি চেক স্টেশনগুলো পাহারাদারির পরিবর্তে কাঠ পাচারের মহোৎসবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ঈদগড়-বাইশারীর বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বনবিটগুলোর আওতাধীন এলাকায় সরকারী অর্থে ও প্রাকৃতিকভাবে সৃজনকৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচারকারীরা দিনে ও রাতে সেগুন, চাপালিশ, গামারী, কড়ই, গর্জন, আকাশমনি, জামগাছসহ নানা প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কেটে সরকারী বাগান সংলগ্ন নিরাপদ জায়গায় স্তুপ করে রাখে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব কাঠ গাড়ীভর্তি করে ঈদগড়-ঈদগাঁও-বাইশারী সড়ক দিয়ে রাতভর পাচার করে ঈদগাঁও ও জেলার বিভিন্ন ইটভাটা এবং স’মিলে। বর্তমানে বনবিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। শুধু এতেই শেষ নয়, বনবিভাগের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোনভাবেই খবর পেয়ে বিশেষ অভিযানে নামে তখন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাছপাচারকারীদের কাছে সে খবর দ্রুত পৌঁছে দেয়। এতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিযান নিষ্ফল হয়। বিশেষ করে রাত ১০টা পেরুলেই শুরু হয় পাচার মিশন। এর পর পথে পথে চলে চাঁদাবাজি। চাঁদা আদায়ে এলাকা ভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছে আদায়কারী সিন্ডিকেট।
ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি কাঠ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। তবে তিনি ঈদগড়ে যোগদানের পর থেকে এই পর্যন্ত কাঠ কর্তন ও পাচারের বিষয়ে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।