তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো:

বাংলাদেশ চাচ্ছে ভারতের পূর্বাঞ্চলে সেভেন সিস্টার বলে পরিচিত পাওয়া ৭টি রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক হোক। চট্টগ্রাম চেম্বার অনেক আগে থেকেই এই ৭ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স¤প্রতি ভারতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ যথেষ্ট অনুকূলে বলে জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্রানজিট সুবিধার দেওয়ার পর এবারই প্রথম ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ১০৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি হয়েছে ৭০০ কোটি ডলারের। ভারতের সেভেন সিস্টারভুক্ত রাজ্যগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। বাড়তি কর্মসংস্থান হবে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সব ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তুতি চলছে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে। এ কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল আলম বলেন, আমরা চাচ্ছি ভারতের ৭ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ব্যবসা শুরু করুকÑ এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আগরতলা চেম্বারের সঙ্গে স¤প্রতি আলাপ আলোচনা হয়েছে। তারাও চাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়াতে। আমাদের রাস্তা আর চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এটি আরো ত্বরান্বিত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ভারতের রাজ্যগুলোতে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের গতিও বাড়বে। তিনি বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল যোগাযোগ, সাবরুম-রামগড় ও দেমাগ্রি-তেগামুখ স্থলবন্দর পুরোদমে চালুর ব্যাপারে উভয় সরকারের মাঝে অনেক আগে থেকে আলাপ আলোচনা চলছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোর মতো চট্টগ্রাম বন্দরকে ২১ শতকের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ জোর কদমে শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্যের সঙ্গে মিয়ানমার, ভুটান ও চীনের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। এসব অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে দেশের অর্থনৈতিক চেহারাও পাল্টে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের ব্যবসায়ীরা অবৈধ বাণিজ্যের ওপর জরিপ চালায়। এতে জানা গেছে, ভারত থেকে যে পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয় তার চেয়েও বেশি পরিমাণ পণ্য অবৈধভাবে দেশে ঢুকে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও অবৈধপথে ভারতে বিপুল পণ্য যায়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির পরবর্তী দরজা বলে পরিচিত ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যের অন্যতম অরুণাচল। প্রায় ৮৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের এ রাজ্যের প্রধান উৎপাদিত ফসল হচ্ছে ধান, ভুট্টা, গম, সরিষা, চিনি ও ডাল। ফলের মধ্যে রয়েছে আনারস, আপেল, কমলা, আঙ্গুর। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে কয়লা, চুন, পেট্রোলিয়াম পণ্য, পাথর। আসামের আয়তন প্রায় ৭৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রধান উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, পাট, চিনি, তুলা। চা, রাবার, কফির বনায়ন। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কয়লা, চুন, পেট্রোলিয়াম পণ্য, লোহা, বিভিন্ন পাথর।

চট্টগ্রাম চেম্বার সূত্র জানায়, এসব রাজ্যের সঙ্গে সংশিষ্ট যে ৩৩টি সীমানা পথ বা স্থলবন্দরের মধ্যে ১৭টি চালু রয়েছে, বাকি ১৬টি নিক্রিয়। মেঘালয় সীমানার মধ্যে ১১টি স্থলবন্দরের মধ্যে ৮টি সক্রিয়। এগুলো হলো- দাউকি-তামাবিল, ভোলাগঞ্জ-ছাতক, বোরসোরা-চেরারগঞ্জ, সেলাবাজার-ছাতক, বাঘমারা-বিজয়পুর, ডালু-নাকুগাঁও, গাছুয়াপাড়া-করইতলি, মেহেন্দ্রগঞ্জ-ধনুয়া। ত্রিপুরা সীমানার ৮টি স্থলবন্দরের মধ্যে ৫টি সক্রিয়। এগুলো হলো আগরতলা-আখাউড়া, শ্রীমন্তপুর-বিবির বাজার, রাগনাবাজার-বাথুলি, খোইয়াঘাট-বালা, মনুঘাট-চাতলাপুর। আসামের সীমানার মধ্যে থাকা ১৩ স্থলবন্দরের মধ্যে ৪টি চালু রয়েছে। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যেসব পণ্য চড়া দামে আমদানি করে তার মধ্যে অনেক পণ্য স্বল্প দামে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্য থেকে আমদানি করা যায়।