ছবি: বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ড উপকূল থেকে জীবিত ও শুক্রবার বাঁশখালী উপকূল থেকে মৃত উদ্ধার রাজ কাঁকড়া।

আহমদ গিয়াস :
চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হাতে লুন্ঠিত হওয়া ছাড়াও প্রতিদিন মাছ ধরা ট্রলারে মারা পড়ছে বঙ্গোপসাগরের একমাত্র ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ নামে পরিচিত ৪৫ কোটি বছরের আদি প্রাণী রাজকাঁকড়া। বঙ্গোপসাগরে লবস্টার শিকারী শিলজালের বোটে ধরা পড়া কয়েক শত রাজকাঁকড়া প্রতিদিন মারা পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দাবী করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকূল থেকে একটি জীবিত রাজ কাঁকড়া ও বাঁশখালী উপকূল থেকে মৃত রাজ কাঁকড়া উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে তারা সেই প্রাণীর ছবি তুলে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠান। যাদুকরী ওষুধী গুণের কারণে বিশ্ববিখ্যাত ও ‘লিভিং ফসিল’ হওয়ার কারণে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ অন্তর্ভূক্ত এই প্রাণীটি।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়া একটি জীবিত রাজ কাঁকড়া প্রতিবেদকের অনুরোধে আবারো বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করে দেন স্থানীয় মৎস্যজীবী তপন জলদাসসহ অন্যান্য জেলেরা।
তপন দাস বলেন, বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে প্রায়ই ধরা পড়ে রাজ কাঁকড়া। এগুলো অনেক সময় জালের সাথে অথবা মাছের সাথে সৈকতে চলে আসে এবং প্রায়ই মারা পড়ে। কিন্তু আমরা এই প্রাণীটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরে এটা সাগরে অবমুক্ত করে দিই। এখন থেকে আমরা প্রাণীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করব।
অন্যদিকে শুক্রবার রাতে বাঁশখালীর ছনুয়া উপকূল থেকে একটি মৃত রাজ কাঁকড়া উদ্ধার করেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন। প্রাণীটি সাগর থেকে ঘাটে ফেরা একটি ট্রলারে জীবিত আসার পর সৈকতে মারা গেছে বলে তিনি জানান।
বাঁশখালী ছনুয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শমসের শরিফী বলেন, আমরা প্রাণীটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন জেলেদের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করব।
‘হর্সশো ক্র্যাব কনজারভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ’ এর অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সমুদ্র) আশরাফুল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরের সীতাকুন্ড থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলে রাজকাঁকড়ার বহু আবাসস্থল চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া সুন্দরবন এলাকাতেও একটি বড় স্টকের আবাসস্থলের খবর পাওয়া গেছে। সামনে এদের প্রজনন মৌসুম। তখন এগুলো আরো ঝাঁকে ঝাঁকে মারা পড়ার আশংকা রয়েছে। আমরা এখনই দৈনিক ৩শ থেকে ৪শ’ রাজ কাঁকড়া মারা পড়ছে বলে ধারণা করছি।
এবিষয়ে উক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি সুপারিশমালা প্রেরণেরও প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ ও ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, রাজাঁকাকড়া সহজে মরে না। কোন কারণে আহত হলে মারা যেতে পারে অথবা কোন প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে। তাই সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাণীটিকে বাঁচাতে হবে এবং এ লক্ষে বোট মালিক সমিতি ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করবে।