ইমাম খাইর, সিবিএন:
বহল প্রতীক্ষিত জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগরদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আজ শনিবার সকাল সোয়া ১১ টার দিকে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে শুরু হয়েছে। পুলিশ লাইন মসজিদের পেশ ইমাম আব্দুল মান্নানের কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। প্রথমে আত্মসমর্পণকারীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। জীবনের ভুল স্বীকার করে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজদৌল্লাহ।অভিশপ্ত জীবন থেকে ফিরে মুক্ত জীবনের চিত্র তুলেন ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু নুরুল আমিন।
জেলা পুলিশের আয়োজনে কাঙ্খিত এই অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম, গোালাবারুদসহ ১৭ টি জলদস্যু বাহিনীর প্রধান, ১২ জন অস্ত্র তৈরীর শীর্ষ কারিগরসহ আত্মসমর্পণ করছে ৯৬ জন দাগি আসামী।তাদের প্রত্যেককে দেয়া হবে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান।
৯৫ জন জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগরকে সেফহোম থেকে প্রিজন ভ্যানে করে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। গেস্ট অব অনার হিসেবে রয়েছেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। স্থানীয় সংবাদকর্মী হারুনর রশীদ সিবিএনকে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি সকাল পৌনে ১১ টায় কালামারছড়াস্থ সোনারপাড়া এসপিএম প্রকল্পের মাঠের হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করন। সেখান থেকে গাড়ীযোগে কারামারছড়া ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান নেন।
কক্সবাজার জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সক্রিয় জলদস্যু ও অস্ত্র তৈরীর কারিগরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষ্যে ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান’টির সভাপতিত্ব করছেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

আত্মসমর্পণকারীদের একাংশ। ছবি- হারুনর রশীদ।

এছাড়া কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, মহেশখালীর ইউএনও জামিরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা, মেয়র মকছুদ মিয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।
জলদস্যু ও অস্ত্র তৈরীর কারিগরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষ্যে ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান’টির মধ্যস্থতা করেন আনন্দ টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো ইনচার্জ এমএম আকরাম হোসাইন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ। ছবি তুলেছেন হারুনর রশীদ।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন–মানসম্মত অস্ত্র তৈরীর জন্য বিখ্যাত কারিগর জাফর আলম, মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুকুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫ জন।
চেয়ারম্যান তারেক শরীফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন, নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫ জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজউদ্দৌল্লাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মোঃ কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫/২০ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। সেখানে ৫ বাহিনীর ৩৭ জন এমএম আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় হয়েছে। তারা প্রতিজন ১ লক্ষ টাকা করে সরকারীভাবে আর্থিক অনুদান পেয়েছে। এরা সাবাই কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। সেটিও এমএম আকরাম হোসাইন মধ্যস্থতা করেন।