মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথমবারের মতো বসছে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসবের আয়োজন ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভাল’। শুক্রবার ২২ নভেম্বর বিশ্বের ১৫টি দেশের ২শ’ জন নৃত্যশিল্পী নিয়ে ৪ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মানের এ আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী নৃত্যশিল্পীদের সংগঠন দ্য ওয়ার্ল্ড ডান্স অ্যালায়েন্স-এশিয়া প্যাসিফিকের (ডব্লিউডিএ-এপি) বাংলাদেশ শাখা ‘নৃত্যযোগ’ প্রথমবারের মতো এ আয়োজনটি করছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পর্যটনের মেলবন্ধন রচনায় এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান উৎসবের প্রিন্সিপাল কিউরেটর ও নৃত্যযোগের সাধারণ সম্পাদক লুবনা মারিয়াম।

বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ডান্স এ্যালায়েন্স এশিয়া প্যাসিফিক কর্তৃক আয়োজিত “Ocean dance festival of Bangladesh” শীর্ষক আন্তর্জাতিক এই নৃত্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদিতে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম.এ খালিদ শুক্রবার ২২ নভেম্বর কক্সবাজার আসছেন। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম.এ খালিদ শুক্রবার বেলা ২’৩০ টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছার কথা রয়েছে। একই দিন তিনি কক্সবাজারের অভিজাত একটি হোটেলে বিকেল ৫ টায় উক্ত নৃত্য উৎসবের উদ্বোধন করবেন।

উৎসবের চার দিন ভোর থেকে মারমেইড ইকো রিসোর্ট সংলগ্ন সৈকতে চলবে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন, কর্মশালা, সেমিনার। সন্ধ্যা থেকে কক্স কার্নিভাল মিলনায়তনে থাকবে দুই দফা নৃত্য পরিবেশনা। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবেন আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচিত শিল্পীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে চলবে জাতীয়ভাবে নির্বাচিত শিল্পীদের পরিবেশনায় লোক নৃত্য, সমসাময়িক নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ও নৃত্যনাট্য।

দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে অমিত চৌধুরী ও সুইটি দাসের ‘রূপান্তর’, জুয়েইরিয়াহ মৌলির ‘অর্ধনারীশ্বর’, শাম্মি আখতারের ‘মাইন’, আনন্দিতা খানের ‘রিফিউজি’, মৌমিতা জয়ার ‘রিলিজিয়ন : অ্যা কজ অব কনফ্লিক্ট ইন কালচার’, আবু নাঈম খানের ‘লালন’, আরিফুল ইসলাম অর্ণবের ‘মানুষ’, তাহনুন আহমেদীর ‘আজান’, মেহরাজ হক তুষারের ‘ট্রাস্ট’, অলকা দাস প্রান্তির ‘কত্থক টু ওড়িশি’, বৃষ্টি ব্যাপারির ‘ফ্রেম অব মাইন্ড’।

বিদেশি শিল্পীদের মধ্যে থাকবে তাইওয়ানের নৃত্য প্রযোজনা ‘বাটু উইথ অর্নামেন্ট’, ‘নট অ্যালোন’, ‘ইমপ্রেশনস অব আওয়ার হোম টাউন’, ‘গ্রেটার দ্যান টু লেস দ্যান’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযোজনা ‘ত্রিকোন কানেকটিভিটি’। ভারতের প্রযোজনা ‘এজেস’, ‘ইনট্রানসিট’, ‘আনশেয়ারড ডিজায়ারড’, ‘টাচ দ্য সাউন্ড’। কোরিয়ার প্রযোজনা ‘স্প্রিং কামিং উইথ আ ওয়ার্ম ব্রিজ’ ও চীনের প্রযোজনা ‘টয়লেট পাম্প’।

এছাড়া যৌথ পরিবেশনায় লিথুনিয়া ও ভারতের শিল্পী ক্রিস্টিনা ডলিনিনা ও শিবানি ভার্মার প্রযোজনা ‘হ্যাভ উই মেট বিফোর?’, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রযোজনা অনন্যা চ্যাটার্জি ও তাসকিন আনহার ‘তফাত’, ভারতের সেফায়ার ক্রিয়েশন ও বাংলাদেশের নৃত্যশৈলির প্রযোজনা ‘কি তা রে বা’।

ভারত ও বাংলাদেশের অনিল কুমার সিং ও মোফাজ্জল আলিফের প্রযোজনা ‘আই অ্যান্ড মাইসেল্ফ’ এবং কানাডার সাশার জারিফের সঙ্গে কোরিওল্যাব থেকে নির্মিত হংকং, ভারত ও বাংলাদেশের একটি বিশেষ প্রযোজনা থাকবে।

কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে প্রথমবারের মতো নৃত্যনাট্য বাদী-বান্দার রূপকথা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। সুকল্যাণ ভট্টাচার্যের নৃত্য পরিচালনায় শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদসহ এতে নাচ করবেন আশি জনেরও বেশি শিল্পী। বাংলাদেশের পরিবেশনায় জাতীয়ভাবে নির্বাচিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সাধনা, নৃত্যাঞ্চল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কল্পতরু, ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, নৃত্যশৈলী, বন্ধু সোশাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি।

উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন লায়লা হাসান, মুনমুন আহমেদ, তামান্না রহমান, রাজদ্বীপ ব্যানার্জি, সাজু আহমেদ প্রমুখ শিল্পী ও তাদের দলের পরিবেশনা। এছাড়া বিভিন্ন জেলার শিল্পী ও আদিবাসী শিল্পীরাও এই উৎসবে নাচ করবেন।

উৎসবের আয়োজন সহযোগী হিসেবে আছে মাত্রা ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই। সমর্থন দিচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও টুরিজম বোর্ড। এ আয়োজনের অ্যাকাডেমিক সহযোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ।