জসীম উদ্দীন:
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠে নামতে শুরু করেছে চাষিরা। কিছু দিনের মধ্যে নতুন লবণ বাজারে আসবে। গত মৌসুমের ৭ লাখ মেট্রিকটন লবণ উদ্বৃত্ত। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি হচ্ছেনা। এভাবে লবণ উৎপাদন হয়েছে যে, যা বিগত ৫৮ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবু কেন সংকট? হেতু কোথায়? প্রশ্ন সবার।
অপর দিকে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা প্রান্তিক চাষিরা।বাজারে লবণের কেজি ৪০ টাকা, চাষি পাচ্ছে মাত্র ৪ টাকা। এ কারনে অনেকেই চলতি মৌসুমে লবণের চাষাবাদ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।এখন কোন রকম রৌদ্রের খরতাপের উৎপাদিত ঘামের ফসল অবিক্রিত লবণ গুলো সঠিক দামে বিক্রি করতে পারলে তারা খুশি। অথচ দেশের একশ্রেণী কুচক্রী মহল গুজব ছড়িয়েছে দেশে নাকি লবণের সংকট চলছে।
শুধু কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর এক ইউনিয়নে প্রায় ১৫ লাখ মনের বেশি লবণ এখনো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব লবণ মাঠিতে গর্তে করে লবণাক্ত পানি দিয়ে রাখা হয়েছে । অর্ধশতাধিক চাষি ও লবণ ব্যবসায়ীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, মাতারবাড়ীর প্রান্তিক চাষিদের রীতি হচ্ছে বর্ষাকালীন সময় লবণ বিক্রি করা।বর্ষায় ওজন সঠিক ও লবণের দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। প্রতিবছর বর্ষাকালীন সময় কক্সবাজারের ইসলামপুরের অর্ধশতাধিক লবণের ইন্ড্রাজট্রি চলে মাতারবাড়ীর লবণের উপরে ভর করে।এ লবণ দিয়ে-সারাদেশে চাহিদা পূরণ করা হয়।
মাতারবাড়ীর লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি মতে, মাতারবাড়ির নতুন ঘোনা, আঠারজন্ন্য ঘোনা,ধুনার ঘোনা,কানকাটি ঘোনা,ফার্ম ঘোনা,ইদ্রিসের বাইরের ঘোনা,ফদারকুম ও লম্বা ঘোনাতে ১৫ লাখ মণের বেশি লবণ রয়েগেছে।
যা বর্ষাকালীন সময় পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় ও দামে কম হওয়ার কারনে বিক্রি করা যায়নি।
মাতারবাড়ীর লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী ওয়াসিম সিকদার জানান, তিনি এখনো তার লবণ বিক্রি করতে পারেননি। চাহিদা না থাকায় মিলারদের অনাগ্রহীর কারনে তিনি এসব লবণ বিক্রি করেননি। তার মতে শুধু মাতারবাড়িতে ১৫ লাখ মণের উপরে লবণ মজুদ রয়েছে। এবং তিনি চলতি মৌসুমে লবণ চাষাবাদ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তার দাবি, সঠিক দাম না পেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হওয়ার পরও লাভেরমুখ দেখতে পাননি তিনি।
আরেক লবণ ব্যবসায়ী মাতারবাড়ির মোঃ মকছুত জানান,শুধু তার চাষিদের অনুমানিক ১২হাজার মণ লবণ তিনি এখনো মাঠের গর্তে ফেলে রেখেছেন।তার দাবি মিলারদের চাহিদা না থাকায় এসব লবণ এখনো পড়ে আছে। একই অবস্থার কথা জানিয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক প্রান্তিক চাষি।
এ ছাড়াও মহেশখালীর,বর ঘোনা, জেলে ঘোনা,বনিয়াকাটা ঘোনা,সন্ধখালি, বালুতলি ঘোণা,খলিবার ঘোনা,পেসিক্কাব’র ঘোনা, ওরগা ঘোনা,পেইক্কা ঘোনা। আটজনের ঘোনায় লাখ লাখ মণ লবণের স্তুুপ গর্তে পড়ে আছে। একই অবস্থা কক্সবাজার সদর, চকরিয়া উপজেলা ও পেকুয়া উপজেলার একাধিক লবণ উৎপাদিত এলাকায়।
বৃহস্পতিবার (২১নভেম্বর) কক্সবাজারের ইসলামপুর লবণ মিল গুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,অনেক মিলে গোলা ভরা ক্রাস করা লবণ মজুদ আছে, কিন্তু বিক্রি নাই।তাই শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছেন।
বৃহস্পতিবার মোটা লবণ বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি ২৪৫ টাকা থেকে সর্বোচ্ছো ২৫০টাকায়। আর পার কেজি ৫.২৫পয়সা থেকে সাড়ে ৫ টাকার মধ্যে। যা প্রান্তিক চাষি পাচ্ছেন কেজিতে মাত্র সাড়ে ৩টাকা থেকে ৪টাকা।
এসব লবণ মিলাররা ক্রয়ের পর পরিশোধিত করে ৭৫কেজি ক্রাস করা লবণের বস্তা বিক্রি করছেন ৫৮০থেকে ৬০০টাকা মধ্যে।যা পার কেজিতে সাড়ে ৭টাকার বেশি সর্বোচ্ছো ৮ টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির জানান, লবণ সংকট হওয়ার প্রশ্নও আসেনা বরং যে পরিমাণ লবণ এখনো মজুদ রয়েছে এ লবণ বিক্রি করাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে ।তিনি গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর কাছে আহবান জানান।
লবণের অর্ডার না পেয়ে মিলার ও শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন বলে জানান, শাহারিয়া সল্টের মালিক ও ইসলামপুর মিলমালিক সমিতির সভাপতি শামশুল ইসলাম আজাদ।তিনি আরোও জানান, হঠাৎ গুজবের কারনে (১৯ নভেম্ভর) কিছু মিলাররা লবণের অর্ডার পায় তবে তা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে অনেকের বাদিলও হয়েছে। তিনি মনে করেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে একটি কুচক্রী মহল দেশীয় লবণ শিল্প ধংসের পায়তারার অংশ হিসেবে এ গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে।
ইসলামপুর মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাষ্টার আবদুল কাদের বলেন, এধরনে গুজব সৃষ্টিকারীরা দেশের শত্রু। এতো যদি লবণ সংকট হয়ে থাকে লবণের অর্ডার নাই কেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি? তিনি বলেন,শুধু বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার জন্য এ সংকট তৈরি করেছে একটি মহল। অথচ
৬ লাখ মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
দেশে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া লবণ সংকট গুজবে রীতিমত বিস্মিত প্রান্তিক চাষিরা। যেখানে লবণ বিক্রি করতে না পেরে চিন্তিত চাষিরা! চাহিদার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন ও বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় লবণ আমদানির ফলে সঠিক দাম না পেয়ে প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন লবণ চাষাবাদ।সবার প্রশ্ন একটাই এ কেমন লবণ সংকট।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে।
এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মওসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে।