নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার সদরের পোকখালীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত বিএনপি নেতাদের ভোটার, বহিরাগতদের প্রভাব বিস্তার, ব্যালট জালিয়াতি, ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে খোদ অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের বিরুদ্ধে। কাউন্সিলকে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে তা বাতিল ও পুনঃ কাউন্সিলের দাবি জানিয়ে জেলা নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ আনেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা।
গত ১৮ নভেম্বর ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি মর্তুজা শাহেদ জামাল। অধিকাংশ ভোটারের সম্মতিও নিয়েছেন, তাই সভাপতি হিসেবে নিশ্চিত নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদি ছিলেন তিনি। ভোটের বেলায় ঘটে তার উল্টো।
মর্তুজা শাহেদ জামাল অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিল অধিবেশনের প্রধান অতিথি আবু তালেব তার পদদপুষ্ট প্রার্থী আবুল হোসেনকে সভাপতি করতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি স্বয়ং উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষভাবে ব্যালটে সীল মেরেছেন। দলীয় বিধিমালা পরিপন্থি আচরণ দেখে সবাই হতবাক হয়ে পড়ি। আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের হুমকি ধমকি দেন। আধিকন্তু পছন্দের প্রার্থী আবুল হোসেনকে সভাপতি ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন আবু তালেব।
একই অভিযোগ অপর সভাপতি প্রার্থী রশিদ আহমদের। তিনি বলেন, সবার প্রত্যাশা ছিল, কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। কিন্তু তৃণমূলের নেতৃত্ব নির্বাচনে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার এমন নগ্ন হস্তক্ষেপ আশা করিনি। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বিকর্তিক কাউন্সিল বাতিল করে পুণঃকাউন্সিল করতে হবে। এজন্য আমরা একজন নিরপেক্ষ প্রতিনিধি চাই।
৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী আবদুল আলীম (বর্তমান সভাপতি) অভিযোগ করেন, গত ১৯ নভেম্বর আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলে কারচুপির নির্বাচন হয়েছে। ভোটের আগের দিন পর্যন্ত আমাদের কাছে চূড়ান্ত কাউন্সিলর তালিকা দেয়া হয়নি। উপজেলা সভাপতি আবু তালেব তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য কাউন্সিলরদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। আমাকে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ব্যর্থ হয়ে ব্যালট বক্সে সীলমারা ব্যালট ঢুকিয়ে দেয়। পছন্দের প্রার্থী ফরিদুল আলমকে সভাপতি হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা ও তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন আবু তালেব। ফরিদুল আলম হত্যা মামলার আসামী। তার পুরো পরিবার বিএনপি। তার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যূতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ শীর্ষনেতাদের অভিযোগ করেছি।
এই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মো. আবদুল্লাহ। দুঃখ করে তিনি বলেন, ভোটের আগে বিনা কারণে আমার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। আমাকে হারিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির ৬৪ নং সদস্য নজরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোষণা দেয়া হয়। অথচ তিনি গোমাতলী উচ্চবিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি কোন রাজনৈতিক দলের পদে থাকতে পারেন না। এই নেতৃত্ব মানিনা।
১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রফিকুল ইসলাম কাজলের অভিযোগ, তার নিশ্চিত জয়কে ছিনিয়ে নিয়ে কারচুপির মাধ্যমে জসিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। বিতর্কিত কাউন্সিলে ঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তারা উভয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
কাউন্সিল নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবকে ফোন করলে পাওয়া যায়নি।