ডেস্ক নিউজ:

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিতে গঠিত অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) পরিচালনায় বিধিমালার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর ফলে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোসহ অনুসন্ধান এবং এ-সংক্রান্ত মামলার তদন্ত পরিচালনায় আর কোনও বাধা রইলো না।

পুলিশ সদর দফতর থেকে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ‘অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯’ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিধিমালায় এটিইউয়ের কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, কাউন্টার রেডিকালাইজেশন এবং ডি-রেডিকালাইজেশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এটিইউ। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার সহায়তায় উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের ওপর প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা নজরদারি করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা, তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ আটকের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে তারা।

বিধিমালায় আরও বলা হয়, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলা এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকারে আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে এটিইউ। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণ ও প্রতিকারসংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বিন্যাসের মাধ্যমে ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে হবে।

এই ইউনিটের অধীনে বিশেষায়িত টিম বা স্কোয়াড গঠন করা যাবে। স্পেশাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাকটিস (সোয়াট) টিম, ক্রাইম সিন ও বোম ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন টিম, ক্রাইসিস ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম, এক্সপ্লোসিভ ডিসপোজাল টিম এবং কে-নাইন স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিশেষায়িত টিম বা স্কোয়াড গঠন করতে পারবেন এই ইউনিটের প্রধান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি ও জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন ইউনিটের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া, উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্তসহ তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে এবং এ-সংক্রান্ত মামলা তদন্তে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদের সহায়তা নেওয়া যাবে। ইউনিটের জন্য স্থাপন করা হবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ সেল ও ডাটাবেজ সেন্টার। একটি লিগ্যাল সেলও গঠন করা হবে।

পুলিশ সদর দফতরের ইকুইপমেন্ট শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সন্ত্রাসবাদ দমনে এটিইউ গঠনের জন্য সরকার অনেক আগেই উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এর অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর দুই বছর গেলো বিধিমালা তৈরিতে। ফলে পুরোদমে অপারেশনাল কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পাননি।

তিনি আরও জানান, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে এই ইউনিটের গঠন ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৮১টি পদ সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ৩১টি ক্যাডার পদ এবং ৫৫০টি অস্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা হয়। যানবাহন যুক্ত করা হয় ৪১টি। ইউনিটের প্রধান হিসেবে একজন অ্যাডিশনাল আইজি, একজন ডিআইজি, দুইজন অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচজন এসপি, ১০ জন অ্যাডিশনাল এসপির পদায়ন হয়ে গেছে। এএসপি পদে ১২ জনের মধ্যে কয়েকজনের পদায়ন হয়েছে। ৭৫ জন ইনস্পেক্টরের পদায়ন হয়েছে। ১২৫ জন সাব ইনস্পেক্টরের মধ্যে এখনও কিছু বাকি আছে। কনস্টেবলসহ অন্যান্য পদবিতেও পুরো নিয়োগ হয়নি। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক নিয়োগ হয়ে গেছে। বাকিগুলোতেও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

এটিইউয়ের কার্যক্রম এখন রাজধানীর বারিধারার বি-ব্লকের ৩৫ নম্বর বাড়ির অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে। স্থায়ীভাবে ইউনিটের কার্যালয় স্থাপনের জন্য পূর্বাচলের পাশে জমি দেখা হয়েছে। একই জায়গায় পুলিশ লাইনও স্থাপন করা হবে। ইউনিটের জন্য যানবাহন ছাড়াও প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি কেনারও প্রস্তাব রয়েছে।

এটিইউয়ের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু কিছু আভিযানিক কার্যক্রম চালানো হলেও এত দিন অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল।’ এখন আভিযানিক কার্যক্রমসহ ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ে পুরোদমে কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।