সংবাদদাতাঃ
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে উপজেলা পরিষদ।

বুধবার (২০ নভেম্বর) উপজেলা পরিষদের মসজিদে অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, প্যানেল চেয়ারম্যান রশিদ মিয়াসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

মরহুম জিএম রহিমুল্লাহর জীবনী তুলে ধরে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জননেতা কায়সারুল হক জুয়েল বলেন- মানুষ নামে নয়, কর্মে বেঁচে থাকে। সেই রকম একজন ব্যক্তি জিএম রহিমুল্লাহ। তিনি দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। সাদাসিধে ও সহজ সরল এই মানুষটি আমৃত্যু মানবসেবায় কাজ করেছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের উচুমাপের নেতা হলেও জিএম রহিমুল্লাহর মধ্যে ছিল না রাজনৈতিক ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য।

আমার জানা মতে, সামাজিক কর্মকান্ড ও পরিষদ পরিচালনায় তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেছেন। সরকারি দায়িত্ব পালনে ছিলেন সর্বোচ্চ আমানতদার ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তার মত কর্তব্যপরায়ণ নেতৃত্ব এই সমাজে খুব বেশি প্রয়োজন।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও মরহুম জিএম রহিমুল্লাহকে সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। তার সঙ্গে আদর্শিক মত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে, ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনবান্ধব ও উন্নয়নের রাজনীতি শেখায়। তাই কক্সবাজারসহ সারা দেশে প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে সবার  পরামর্শে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই।

শেষে মরহুম জননেতা জিএম রহিমুল্লাহর আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া করা হয়।
উল্লেখ্য, জিএম রহিমুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ২০ নভেম্বর কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হোটেলের চতুর্থ তলার ৩১৬ নম্বর কক্ষে আগের রাতে একাই ঘুমিয়েছিলেন তিনি।
জিএম রহিমুল্লাহ কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বানিয়াপাড়ার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। মুত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ছিলেন।

জিএম রহিমুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
জিএম রহিমুল্লাহ ১৯৬৬ সালে ৩০ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতাঃ লোকমান হাকিম, মাতাঃ দিলদার বেগম। চার ভাই চার বোনের মধ্যে জিএম রহিমুল্লাহ সবার ছোট। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারুয়াখালী গ্রামে যে কয়জন সমাজ সচেতন ও শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন জিএম রহিমুল্লাহর পিতা লোকমান হাকিম ছিলেন অন্যতম। বড় ভাই সলিমুল্লা কক্সবাজার সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন।

শিক্ষাজীবনঃ
পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান জিএম রহিমুল্লাহ ছোটকালে অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। বাল্যকালে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিতে অসাধারণ প্রতিভা প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি মানুষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।সচেতন পিতা-মাতা স্বপ্ন দেখতেন ছেলে একদিন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও দেশকে আলোকিত করবেন।সেই লক্ষ্যেকে বুকে ধারণ করে পিতা তাকে গ্রামের নিকটবর্তী সাবেক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পঞ্চম শ্রেণী ও ভারুয়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করান। পিতামাতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তাকে ১৯৮০ সালে কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি, সাতকানিয়া সরকারী কলেজ হতে ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় বিভাগে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বিএ অনার্স ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রী অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবনঃ
মাধ্যমিকে অধ্যয়নের সময় সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সমর্থক ফরম পূরনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি।ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে তাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অনেক বাঁধা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। শিবিরের সাথী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিন তাকে নিজ বাড়ীর জানালা ও দেওয়াল ডিঙ্গিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে হয়েছিল।রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞের প্রারম্ভ হতে তার আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার নিমিত্তে অল্পদিনের মধ্যে তিনি সিনিয়রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ফলে মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন থেকেই তার ছাত্র নেতৃত্বের সূচনা হয়। পর্যায়ক্রমে স্কুল, কলেজ, থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে কক্সবাজার শহর ছাত্র শিবিরের সভাপতি, ১৯৮৭ ও ৮৯ সালে কক্সবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে অনন্য রাজনৈতিক প্রতিভার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও ১৯৯২-৯৩ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে সংগঠনের জন্য অতিরিক্ত খাটুনি ও নিষ্ঠা সেখানকার ইসলাম প্রিয় মানুষ জিএম রহিমুল্লাহকে চোখের মনি হিসেবে মনে করতেন। পরে ১৯৯৪-৯৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৬- ৯৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে জিএম রহিমুল্লাহ যে সুন্দর, নৈতিক, পরিচ্ছন্ন, সন্ত্রাসমুক্ত ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি উপহার দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টালগ্ন থেকে অদ্যাবধি কারও পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তার সততা, সাহসীকতা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দলমত সকলেই তাকে অত্যন্ত সম্মান ও সমীহ করতেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ্ববর্তী স্থানীয় অপরাধীরাও অপরাধ সংগঠিত করতে জিএম রহিমুল্লাহর ভয়ে তটস্থ থাকত।বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বশীল থাকার সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ফলোআপ সংবাদ প্রচারের পাশাপাশি জিএম রহিমুল্লাকে নিয়ে সনামধন্য অনেক প্রত্রিকায় সাংবাদিকেরা কলাম লিখেছিলেন।শুধু তাই নয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি ১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে সারা বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন।মূল সংগঠন জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে কক্সবাজার শহর আমিরের দায়িত্ব পালন করার পরে তিনি ২০১২ সাল হতে মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কক্সবাজার জেলা জামাতের সেক্রেটারী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।২০১২ সাল হতে মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।রাজপথে আন্দোলনের সময় জিএম রহিমুল্লাহর তেজদীপ্ত বক্তৃতা, অসীম সাহসীকতা, প্রশংসনীয় দৃঢ়চেতা মনোভাব ও প্রশাসনের সাথে চতুরতার সাথে মোকাবিলা নিজ দলের কর্মী সমর্থকদের পাহাড়সম অনুপ্রেরণা জোগাতে সক্ষম হতো।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে জিএম রহিমুল্লাহঃ
জীবনে প্রথম ২০০৩ সালে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ জন্মভূমি ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। হেভিওয়েট প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সেই নির্বাচনে তিনি রেকর্ড সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে বিজয় লাভ করেন। তার সরলতা, অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণ, আর্থিক অসচ্ছলতা ও গ্রাম্য পলিটিক্সের মারপ্যাঁচের অদক্ষতার কারণে তিনি কিছুটা হোঁচট খাওয়া সত্বেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও উন্নতমানের বেড়িবাঁধ নির্মাণের অগ্রগতি, ও টেন্ডারকৃত ভারুয়াখালী – খুরুশকূল সংযোগ সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক সূচনা ও এই সেতুর প্রথম আবেদনকারী সহ উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে সম্পন্ন করেছিলেন।সেতু বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম প্রচেষ্টার কারনে অনেকে জিএম রহিমুল্লাহকে ভারুয়াখালী – খুরুশকূল সংযোগ সেতুর আবেদনের সূচনাকারী হিসেবে ভেবে থাকেন। তার চেয়ারম্যান পিরিয়ডে ধলিরছড়া হতে ভারুয়াখালী পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত প্রধান সড়কটি কার্পেটিং এ উন্নিত করা হয়।তিনি ২৬-০৩-২০০৩ সাল হতে ০৬-০৮-২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেছেন।
২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে তিনি মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করে প্রতিপক্ষের প্রবল ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার স্বত্বেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি যে সৎ, যোগ্য ও অপরাজিত নেতা ছিলেন তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের দেশে ছোটখাট রাজনৈতিক নেতা হতে পারলে ব্যাতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ নেতা অসদুপায় অবলম্বন করে ধনসম্পদশালী হয়ে যায়। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরেও তিনি ছিলেন একেবারে নির্লোভ তার মজবুত ঈমান তাকে কোন প্রকার দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। জিএম রহিমুল্লাহর চেয়ারম্যান পিরিয়ডের সময় দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম ইতিহাসে অনেকদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে।সহজে ২% হতে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করার যে সুবর্ণ সুযোগ ছিল তিনি আর্থিক অভাব সত্বেও তা কখনো গ্রহণ করেননি।উপজেলার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্ব প্রতিটি স্থানে সমভাবে বন্টন উপজেলার ইতিহাসে শতাব্দীকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার অজুহাতে ২০১৫ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পদচ্যুতি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে যে নোটিশ প্রদান করেছিল হাইকোর্ট তা বহাল রাখা সত্বেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আপিলের মাধ্যমে তিনি পনের দিনের ব্যবধানে স্বপদে ফিরে এসে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সমাজসেবা, ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারঃ
তার ধ্যানে, জ্ঞানে, মননে, সদা সমাজসেবা ও ইসলামকে ভালবাসতেই প্রস্ফুটিত হয়েছে তার জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত। অসীম সাহসীকতা, মেধা ও অনুপম আদর্শ গুণে পিচ্ছিল রাজপথকেও তার সহজ করে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামী করনের মহান লক্ষ্যে তিনি প্রতিনিয়ত মেহনত করে গেছেন। তাই ইসলামী শিক্ষাকে প্রসস্থ করার মানসে জন্মভূমি ভারুয়াখালীতে পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জায়গায় তিনি ২০১৪ সালে হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রঃ) বালিকা মাদ্রাসাটি এককভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটি ভারুয়াখালীতে প্রথম বালিকা দাখিল মাদ্রাসা হওয়ায় সকলের নিকট প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাদ্রাসাটির পাশে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে তিনি জীবদ্দশায় জীবনের পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে নিতে পেরেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন সরকারী বরাদ্দ ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতরণ করতেন। তিনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, তিনি বাংলা বাজার আইডিয়াল ইনস্টিটিউট , ভারুয়াখালী মুফিদুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, পানির ছড়া আইডিয়াল কেজি স্কুল, পূর্ব ভারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উৎসা দিয়ে , সাহস দিয়ে, বরাদ্দ দিয়ে ও নানাভাবে সহযোগীতা করে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যঃ
তিনি অত্যন্ত খোদা ভিরু, নম্র, ভদ্র ও বাকপটু সম্পন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। সময় অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য সচেষ্ট থাকতেন। কোথাও সফরকালে সফর সঙ্গীর সাক্ষ্য মতে প্রায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে শেষ রাত্রে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন। খুব কম মানুষই তাকে আগে সালাম দিতে পারতেন।ছোট-বড় সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে তিনি আগে সালাম দিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কৌশল বিনিময় করতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠে প্রতিবাদ তার চরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণাবলী। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য তিনি সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। দুর-দুরান্তের সীরাত মাহফিল (সঃ) এ উপস্থিত হয়ে নিয়মিত ওয়াজ নছিহত শুনতেন এবং ইসলাম প্রিয় মানুষের সাথে একাত্মতা পোষণ করতেন। কোন মানুষ ইন্তেকাল করলে তিনি দুর্গম পাহাড়ে হলেও মৃত ব্যক্তির পাশে ছুটে যেয়ে জানাযায় উপস্থিত হতেন এবং মৃতব্যক্তির আত্বীয় স্বজনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতেন।বাংলাদেশের জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য তার হায়াতে জিন্দেগীর বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন।

পারিবারিক জীবনঃ তিনি ২০০০ সালে মহেশখালী উপজেলার কতুবজুম ইউনিয়নের অধিবাসী কক্সবাজার সাগরগাও হোটেলের সত্ত্বাধিকারী পিতাঃ জালাল আহমেদ মাতাঃ জুহুরা বেগমের অনার্স-মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষিত মেয়ে সাজেদা পারভীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিবাহিত জীবনে তিন মেয়ে ও এক ছেলে জন্ম গ্রহণ করেন। জিএম রহিমুল্লাহর মৃত্যুকালে সবার ছোট একমাত্র ছেলে জিএম নাবহানের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর ছয় মাস।

মৃত্যু ও জানাযাঃ ২০ নভেম্বর ২০১৮ ইংরেজী তারিখে কক্সবাজার সাগর গাও হোটেলে ৩১৬ নং কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় ৫৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর মাস কয়েক পূর্ব হতে হয়রানি মূলক মিথ্যা রাজনৈতিক মামলার কারনে তিনি বাড়ীর বাইরে রাত্রি যাপন করতেন। ক্ষণজন্মা এই পুরুষের আচমকা মৃত্যুর খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে তার আত্বীয়-স্বজন , বুন্ধুবান্ধব, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সর্বস্তরের মানুষের অন্তর আত্মা বিষাদের কালো মেঘে ঢেকে পড়ে। শেষ বারের মতো প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য তার কফিনের পাশে প্রত্যেক মানুষকে লম্বা লাইনে দাড়াতে হয়েছিল। ২১ নভেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায় জানাযার জন্য ঘোষিত স্থান কক্সবাজার পৌরসভার পুরাতন জেলখানা মাঠ জানাযা শুরু হওয়ার অনেক আগেই মুসল্লীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।জেলখানা মাঠ, পাশের রাস্তাঘাট, অলিগলি, পৌর পিপেরেটরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কক্সবাজার স্টেডিয়াম, হাসপাতাল সড়ক, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের সড়ক, মাহাজের পাড়া সড়কসহ আরো বিভিন্ন সড়ক মুসল্লীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় অর্থাৎ যে যেখানে পারে জানাযার নামাজে অংশ গ্রহণ করে। লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এই জানাযা কক্সবাজারের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বৃহৎ জানাযা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মরহুমের জন্মভূমি ভারুয়াখালীতে দ্বিতীয় জানাযায় আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন বিশাল মাঠ ও পাশের সড়ক মুসল্লীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ভারুয়াখালীর ইতিহাসে এত বড় জানাযা মানুষ আর দেখেনি। জানাযা শেষে তার প্রতিষ্ঠিত হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার পুকুরের পশ্চিম পাড়ে চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়েছে।