মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেই আগামী শনিবার হচ্ছে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর আত্মসমর্পণের জন্য নির্ধারিত এই মাঠ পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সহ উর্ধ্বতন কর্মকতারা। আগামী ২৩ নভেম্বর শনিবার সকাল ১১ টায় কালারমার ছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই মাঠে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করা হবে। সোমবার ১৮ নভেম্বর সকাল ১২ টার দিকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মাঠ পরিদর্শনকালে এসপি এ. বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম আগত অতিথিদের নিরাপত্তা, অভ্যর্থনা, প্রটোকল, জলদস্যুদের জমায়েত, তাদের অস্ত্র জমা করা, যাতায়াত সুবিধা, প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ইত্যাদি সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে রেকি ও ম্যাপ তৈরি করে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক ব্যবস্থাসমেত পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আগামী বুধবার থেকে প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি সহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে বেশী অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত এই মহেশখালী উপজেলার কালামারছরা ইউনিয়ন। খুন, রাহাজানি, দস্যূতা, অপহরণ সহ সব জগন্য অপরাধকর্ম সংগঠিত হওয়া কালারমারছরার জন্য একেবারে নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।

মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কূখ্যাত বেশ ক’টি জলদস্যু বাহিনীর সর্দার ও বাহিনীর সদস্যরা এদিন স্বদলবলে আত্মসমর্পণ করছেন। আত্মসমর্পণ করতে মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসার সংখ্যা আপাতত প্রায় একশো মতো হলেও এ সংখ্যা আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আরো বাড়তে পারে। কারণ আত্মসমর্পণে আগ্রহী অনেক জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারনের অপেক্ষায় ছিলো। এখন তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় অপেক্ষায় থাকা এরকম আগ্রহীরা মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ন্ত্রণে আসার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করছে বলে মধ্যস্থতাকারী প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়া এর বাসিন্দা এম.এম আকরাম হোসাইন সিবিএন-কে জানিয়েছেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি প্রধান অতিথি, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) বিশেষ অতিথি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, স্থানীয় অন্যান্য সংসদ সদস্যগণ, কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতারা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে সিবিএন-কে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছেন। অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সভাপতিত্ব করবেন।

অনুষ্ঠানে যোগদিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার), পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম আগামী শুক্রবার ২২ নভেম্বর কক্সবাজার পৌঁছাবেন বলে সুত্রটি সিবিএন-কে জানিয়েছেন।
সুত্রমতে, অস্ত্রের কারিগর ও জলদস্যুরা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম সহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সফল করতে ও জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগরদের তাদের আস্তনা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আনতে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যস্থতাকারী আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইন বিরাট ঝুঁকি নিয়ে এখন দিনরাত মহেশখালী উপকূল ও সাগরে অবস্থান করছেন।

আত্মসমর্পণকারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদেরকে প্রনোদনা দেওয়া হবে বলে সুত্রটি সিবিএন-কে জানিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণের পর অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হবে। তবে এ মামলা থেকে আত্মসমর্পণকারীরা সহজে মুক্তি পেতে মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্র পক্ষ তাদেরকে সহযোগিতা করবে। সুত্র আরো জানায়, প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আগামী ২৩ নভেম্বর প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বরের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম কক্সবাজারে চলে আসবে বলে সুত্রটি সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন। এটি হবে মহেশখালীতে জলদস্যুদের ২য় দফায় আত্মসমর্পণ। সোমবার ১৮ নভেম্বর কালামারছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন কুমার দাশ গুপ্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক বিভাগ) বাবুল চন্দ্র বণিক, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্যস্থতাকারী আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইন, মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, চকরিয়া মডেল থানার ওসি হাবিবুর রহমান, কালারমার ছরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ সহ স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসংগত, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে অনুরূপভাবে ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেখানে ৪৩ জনের মধ্যে বর্তমান আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় ৩৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলো। এছাড়া চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী ১০২ জন ইয়াবাকারবারী টেকনাফে চ্যানেল ২৪ টিভি’র তৎকালীন সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এম.এম আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় দেশে প্রথম মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেদিনের মাদক কারবারী আত্মসমর্পণ করা ছিলো এ দেশের জন্য একটা রেকর্ড।