ডেস্ক নিউজ:
ধূমপান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যারা তরুণ বয়সে ধূমপান শুরু করেন তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা ধূমপান অব্যাহত রাখেন তাদের মাত্র ৫ গুণ বেশি জটিল রোগব্যাধি হয় তাই নয়, ২৫ গুণ বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তামাক পাতা ও জর্দা যেমন ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি ধূমপানও ডায়াবেটিসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তামাক তথা ধূমপানজনিত কারণে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন মানস- এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বারডেম হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি বারডেম হাসপাতালের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জরিপ প্রতিবেদনেও এসব তথ্য উঠে এসেছে। এটি প্রতিষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক তথ্য বলে জানান তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ধূমপানের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখই মারা যান সরাসরি ধূমপানের কারণে। আর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অকালমৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। বিভিন্ন গবেষণায় অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় তিন গুণ বেশি বলে দেখা গেছে।

জনস্বাস্থ্য ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ধূমপানের প্রতিক্রিয়া এতটাই ব্যাপক যে, এর ফলে শরীরের প্রায় সব অঙ্গেরই ক্ষতি হতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন মানুষের ক্ষেত্রে ধূমপানের প্রভাব আরও মারাত্মক। কেননা, ডায়াবেটিস আছে এমন ধূমপায়ীদের শরীরে ‘ব্লাড সুগার’ বা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে নিকোটিন। অন্যদিকে, ধূমপানের অভ্যাসের কারণেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ বলে যথাযথভাবে চিকিৎসাধীন না থাকলে, এর থেকে মারাত্মক সব শারীরিক জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে হৃদরোগ, কিডনির রোগ, স্নায়ুরোগ, চোখের রোগ এবং ফুট আলসারের মতো নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

ধূমপানের কারণে ডায়াবেটিসজনিত এই সব জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত পরিপাকের ওপর ধূমপানের প্রভাব থেকে প্রদাহ বেড়ে যায় এবং রক্তনালিগুলো ভেতরের দিক থেকে আক্রান্ত হতে থাকে। ধূমপানের কারণে নিকোটিনের প্রভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ডায়াবেটিক আক্রান্তদের জন্য রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। এ কারণে ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিরা ধূমপায়ী হলে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। আর ধূমপায়ীদের মধ্যে কিডনি ও স্নায়ু রোগের ঝুঁকি সব সময়ই বেশি।

অধূমপায়ী ডায়াবেটিকদের চেয়ে ধূমপায়ী ডায়াবেটিকদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় তিনগুণ বেশি হতে পারে। ধূমপানের কারণে রক্তনালির ভেতরের দিকের আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সেখানে বাড়তি মেদ জমা হয়ে রক্তনালি সরু হয়ে যেতে পারে। এমন হলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। দিবসটির প্রাক্কালে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়াবেটিস। কিন্তু এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ হলেও অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে ও পরে ধূমপান করেন। ক্ষতিকর জেনেও একজন ডায়াবেটিস রোগীর ধূমপান করা ‘আত্মহত্যার’ শামিল।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর জেনেও ধূমপান করছে মানুষ। কোম্পানিগুলো তাদেরকে নানাভাবে ধূমপানে প্রলুব্ধ করছে।

সিগারেট ও জর্দা ব্যবসায়ীদের ‘হায়েনা’ আখ্যা দিয়ে ডা. আজাদ বলেন, তাদের প্ররোচনায় ক্ষতি জেনেও ধূমপান থেকে বিরত থাকছে না ধূমপায়ীরা। সিগারেট ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে হলে ধূমপায়ীরা যেন নিজেরা অনুধাবন করতে পারে এমন উপযোগী ভাষা দিয়ে বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।