ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের 

ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
কক্সবাজারের রামু উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে চলতি দায়িত্ব প্রদানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের প্রাথমিক বিদ্যালয় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ পন্থায় নিয়োগ ও অনৈতিক তদবিরের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ আব্দুল ওয়াহেদের স্বাক্ষরে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জারিকৃত প্রজ্ঞাপন, যার স্মারক নং-৩৮.০০.০০০০.০০৮.১২.০৭০.১৮-৭৪২ অনুযায়ী রামু উপজেলার ৮৩ ক্রমিক থেকে ১১৪ পর্যন্ত মোট ৩১ জন সহকারী শিক্ষক পদ থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে পদায়নের উপযুক্ত। ইতোমধ্যে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ১০৯ ক্রমিক পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদায়িত হয়ে ‘প্রধান শিক্ষক’ হিসাবে শূন্য পদে যোগদান করেছেন।
নীতিমালা ও সরকারের নির্দেশনা মতে, ১১০ ক্রমিকধারী খুনিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী রামু সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ পাবেন।
কিন্তু তদস্থলে নিয়ম ভেঙ্গে অনৈতিকভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ৮৮ ক্রমিকের মোক্তার আহম্মদ।
তিনি পশ্চিম জোয়ারিয়ানালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রায় এক বছর পূর্বে ব্যাংডেবা আহমদ কামাল চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘প্রধান শিক্ষক’ পদে যোগদান করেছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, রামু সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে অনৈতিক পথে হাঁটছেন মোক্তার আহম্মদ। অনৈতিক তদবির শুরু করেছেন। যাতে জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অফিসের (ডিপিও) রামুর দায়িত্বে থাকা রাখাল কৃষ্ণ দাসের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করা হয়েছে।
খুনিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারী নীতিমালা ও নিয়মের আলোকে এখন আমার পদায়নের কথা। কিন্তু আমার স্থলে অবৈধভাবে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিয়োগ পেতে নানামুখী তদবির শুরু করেছেন ব্যাংডেবা আহমদ কামাল চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানকৃত মোক্তার আহম্মদ। তাকে নিয়োগ দেয়া হলে সরকারের নীতিমালা যেমন লঙ্ঘিতে হবে, ঠিক আমার অধিকারও ক্ষুন্ন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার পিতা আব্দুর রহিম চৌধুরী ১৯৭১ সালে রামু থানা আক্রমণ ও অস্ত্র লুট মামলার আসামি। তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খুনিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্বে ছিলেন। দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন আমার পিতা আব্দুর রহিম চৌধুরী। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হিসেবে আমার সাথে এমন ষটতামি, প্রতারণা মেনে নিতে পারিনা।’
ভুক্তভোগি রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমার স্থলে অনৈতিকভাবে অন্য কাউকে নিয়োগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অফিসের (ডিপিও) রামুর দায়িত্বে থাকা রাখাল কৃষ্ণ দাসের সাথে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের ক্রমিক অনুসরণ না করে নিয়োগ বা পদায়নের কোন সুযোগ আছে কিনা?
উত্তরে বলেন, কোন সুযোগ নাই। জারীকৃত প্রজ্ঞাপন মেনে নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে।
কোন মন্ত্রী, এমপির সুপারিশ কাজ হবে কিনা? জানতে চাওয়া হয়।
তাতেও বলেন, না। তাহলে ৮৮ ক্রমিকের মোক্তার আহম্মদ কিভাবে ১১০ ক্রমিকের সময় তদবির করেন? প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, ‘আমি তো ছোট কর্মচারী। এ বিষয়ে ডিপিও স্যার ভালো জানবেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) শফিউল আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘আমি একটু অফিসের বাইরে। বিস্তারিত জেনে বলতে হবে।’
তবে, বিকেলের দিকে প্রতিবেদককে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেন ডিপিও। বিকালে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি কিংবা পদায়নে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
রামু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকারি নীতিমালার আলোকে পদায়ন করা না হলে শিক্ষক সমাজের মাঝে যেমন হতাশা দেখাা দেবে, তেমনি দুষ্ট লোকজন অপরাধ করতে উৎসাহ পাবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি রাখা দরকার।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে এমন অভিযোগ মেনে নেয়া যায়না। একজন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, সঠিক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের যাতে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, সে বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ব্যবস্থা নিবেন।