ডেস্ক নিউজ:
♦ দুই জেনেরিকের ৪০টির বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে ১০টির বেশি কম্পানির ♦ সিআইডির ল্যাব টেস্টে একটি কম্পানির টাপেন্টাডলে মিলেছে অ্যামফিটামিন ♦ পরীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ♦ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

দেশের কয়েকটি নামিদামি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের তৈরি বেশ কিছু ওষুধে ইয়াবার উপাদান হিসেবে পরিচিত অ্যামফিটামিন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো কোনো ওষুধ কম্পানির নির্দিষ্ট এক বা একাধিক ওষুধে ইয়াবার উপাদান থাকার প্রমাণ পেয়েছে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে। বিষয়টি সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরে থাকলেও এখন পর্যন্ত এসব ওষুধ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করা কিংবা ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই এসব ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তালিকায়ও ওই ওষুধের নাম রয়েছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওষুধ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত অনেকেই।

সম্প্রতি লালমনিরহাটে একটি ওষুধ কম্পানির কিছু ওষুধসহ একটি চক্রকে হাতেনাতে ধরার পর পরীক্ষায় তাতে অ্যামফিটামিন পাওয়া গেছে।

ওই সূত্র ধরে অনুন্ধানে নেমে দেখা যায়, ব্যথানাশক ওষুধ ‘টাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড’ জেনেরিকের ওই ওষুধটি অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস্, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্, এস্কাইফ ফার্মাসিউটিক্যালস্, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস্, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস্সহ কমপক্ষে আটটি বড় প্রতিষ্ঠান ৩০টির বেশি ব্র্যান্ড নামে ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিলিগ্রাম ডোজে ট্যাবলেট আকারে তৈরি ও বাজারজাত করে।

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার টনিক?

এ ছাড়া একটি বিদেশি কম্পানি ও দেশীয় আরো তিনটি কম্পানি দেশের বাজারে ছেড়েছে ‘মেথাইফেনিডেট হাইড্রোক্লোরাইড’ জেনেরিকের আরেকটি ওষুধের কয়েকটি ব্র্যান্ড। এগুলোতেও রয়েছে ইয়াবার উপাদান অ্যামফিটামিন। এক শ্রেণির চিকিৎসক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার টনিক হিসেবে অ্যামফিটামিনযুক্ত কিছু ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্বের কিছু দেশে একসময় এসব ওষুধ ব্যবহার করা হলেও এগুলোর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে যেকোনো ফরম্যাটের অ্যামফিটামিন নিষিদ্ধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কৌশলে এসব ওষুধ কম্পানি এগুলো তৈরি ও বাজারজাত করছে। সরকারের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির একাধিক বৈঠকেও অ্যামফিটামিনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে এসব ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত না করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এর পরও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা বন্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানান ওষুধ বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এককথায় অ্যামফিটামিন নিষিদ্ধ। এর পরিমাণ যতটুকুই পাওয়া যাক না কেন, সেটা থাকতে পারবে না। তবে উপযুক্তভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হতে হবে।’

জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশের এক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। কিন্তু সেটি আমরা পূর্ণাঙ্গ বলে মনে করছি না। আমরা তাদের কাছে ওই স্যাম্পলগুলো চেয়ে পাঠিয়েছি। এ ছাড়া যেহেতু ওই ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাই আমরা নিজেদের উদ্যোগেও ওই জেনেরিকের ওষুধ পরীক্ষা করে দেখব। যদি এর মধ্যে ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ কিছু পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

আমাদের ওই ওষুধটির ভেতর অ্যামফিটামিন থাকার কথা নয়। এর পরও আমি দেখছি আসলে কী ঘটেছে

টাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইডের তিনটি ডোজের ট্যাবলেট তৈরি ও বাজারজাত করা অন্যতম প্রতিষ্ঠান অপসোনিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ওই ওষুধটির ভেতর অ্যামফিটামিন থাকার কথা নয়। কারণ অ্যামফিটামিন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। এর পরও আমি দেখছি আসলে কী ঘটেছে বা আমাদের ওষুধে এমন কিছু আছে কি না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অ্যামফিটামিনযুক্ত কোনো ওষুধ প্রেসক্রাইব করি না। কোন ওষুধে কী কী উপাদান আছে, তাও সব সময় আমাদের জানা থাকে না। এ বিষয়গুলো ওষুধ বিশেষজ্ঞ কিংবা ওষুধ কম্পানিগুলোর জানার বিষয়।’

‘টাপেন্টা’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট পৌরসভার নিউ কলোনি হাফেজিয়া মাদরাসা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি বাবুল মিয়াকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একই দিন বন্ধু ওষুধ ফার্মেসির মালিক আশরাফুজ্জামান মণ্ডলকে আটক করে লালমনিরহাট থানার পুলিশ। এ সময় ৪২০টি ‘টাপেন্টা’ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ট্যাবলেট এস্কাইফ ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি। বাবুল মিয়া জানিয়েছেন, তিনি ওই টাপেন্টা ট্যাবলেট আশরাফুজ্জামান মণ্ডলের কাছ থেকে কেনেন।