ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজারে উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রথম বারের মত হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনার উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই হ্যচারীর যাত্রা শুরু হয়েছে। ২০টি মা কাঁকড়া রয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। এখান থেকে থেকে বছরে ১০ থেকে ১১ লাখ ৭ লাখ পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে। ২ শতক জমিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এই হ্যাচারীতে ১২টি হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। কাঁকড়ার নিবিড় পর্যবেক্ষণে কাজ করছে ৩ জন। রয়েছে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান।

কক্সবাজারের কলাতলী মদিনা হ্যাচারিতে উদ্যোক্তা অং চিন কাঁকড়া পোনার হ্যাচারিটি স্থাপন করেন। কাঁকড়া মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ হ্যাচারিতে উৎপাদিত কাঁকড়া পোনার চাষ করে কাঁকড়া রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে।

কাঁকড়ার হ্যাচারি স্থাপনের মাধ্যমে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করার মত উদ্যোক্তা অং চিন এর মাধ্যমে এ উদ্যোগ নেন কোস্ট ট্রাস্ট এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। এতে সম্পুর্ণ রপ্তানিযোগ্য কাকড়া উৎপাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কাকড়া চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিন কোরিয়া ও অষ্ট্রেলিয়াতে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক উৎস্য ও চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত কাকড়া রপ্তানি করে বছরে ২৩ মিলিয়ন ডলার আয় করা হয়। কক্সবাজারে উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রথম কাঁকড়ার হ্যাচারির পোনার উৎপাদন কার্যক্রম উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়। এ হ্যাচারিতে প্রথম উপাদিত কাঁকড়া পোনা চৌফলদন্ডির এক হ্যাচারিতে অবমুক্ত করা হয়।

এদিকে, শনিবার (৯ নভেম্বর) উদ্যোক্তা পর্যায়ে নব প্রতিষ্ঠিত কাঁকড়ার হ্যাচারিতে নিয়মিত উৎপাদন কার্যক্রম শুরু উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের একটি হোটেলে কোস্ট ট্রাস্ট এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর যৌথ উদ্দ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  সংবাদ সম্মেলনে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক ড. আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্য রাখেন, কোস্ট ট্রাস্ট এর সহকারী পরিচালক মকবুল আহমদ, প্রধান উদ্যোক্তা (উন্নয়ন) বারেকুল ইসলাম চৌধুরী, আঞ্চলিক টীম লিডার জাহাঙ্গীর আলম, পিকেএসএফ এর ভেলো চেইন প্রজেক্ট ম্যানেজার শেখ নজরুল ইসলাম, বরগুনা জেলার সংগ্রামের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী মো: মাসুম, উদ্যোগী কাঁকড়া চাষীরা। এতে সঞ্চলনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ।

আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিকাশমান কাঁকড়া চাষ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ইফাদের অর্থায়নে পিকেএসএফ এর আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় দেশের অন্যতম বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট ট্রাস্ট কলাতলীতে কাঁকড়ার হ্যাচারিটি স্থাপন করেছে। সমুদ্র ও এর উপকূলীয় নদী-নালা হতে মৎস্য সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে সরকারী বিধি নিষেধ ও আইন কানুনের জন্যে প্রাকৃতিক উৎস হতে বছরের সবসময় কাঁকড়া আহরণ করা যায় না।

কাঁকড়া হ্যাচারির উদ্যোক্তা অং চিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাঁকড়া পোনা উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রযুক্তিগত এবং অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে এবং কাঁকড়ার পোনার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন করতে পারছিলেন না। তার স্বপ্ন এবং প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কোস্ট ট্রাস্ট এবং পিকেএসএফ এগিয়ে আসে। কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে আমরা সফল হই। তবে চাহিদার তুলনায় আমরা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন করতে পারছি খুবই কম।

উখিয়ার বালুখালীর কাঁকড়া হ্যাচারি উদ্যোক্তা মোঃ বেদার উদ্দিন বলেন, পিকেএসএফ এবং কোস্টের সহায়তায় আমরা কাঁকড়ার পোনার উৎপাদনে কাজ করছি। আশা করি এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বারেকুল ইসলাম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, প্রাকৃতিক উৎস সমুদ্র ও নদী-নালা হতে বছরে মোটাতাজাকরণের জন্যে ছোট আকারের কাঁকড়া প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র প্রায় ২ শতাংশ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কাঁকড়ার পোনা বা ছোট কাঁকড়া না পাওয়ার কারণে সারা বছরের পরিবর্তে কিছু সময়ে অল্প সংখ্যক চাষী কাঁকড়া চাষ করছে। তবে কাঁকড়ার পোনা না পাওয়ার কারণে নতুনভাবে আরো ২.৫-৩.০ লক্ষ দরিদ্র লোক কৃষক কাঁকড়া চাষে আসতে পারছে না। বাংলাদেশ বছরে ৭,৬৬২ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের সমগ্র উপকূলী অঞ্চলে জলবায়ু পরিবতনের সাথে অভিযোজিত কর্মকা- হিসাবে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ সম্প্রসারণের মাধ্যমে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক আকারে কাঁকড়ার হ্যাচারি স্থাপনের মাধ্যমে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষে উদ্যোক্তা পর্যায়ে কক্সবাজারে কাঁকড়ার হ্যাচারির পোনা উৎপাদন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, এই উদ্যোগ শুধুমাত্র জাতীয় অর্থনীতিতেই অবদান রাখবে না, বরং ১ নাম্বার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।