সাংবাদিক এমএম আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণের জন্য আইয়ুব আলীকে সেফহোমে নিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্ত। এসময় স্বজন ও এলাকাবাসীকে বিদায় জানাতে দেখা যাচ্ছে। –ছবিঃ সিবিএন। 

ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
মহেশখালীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্রের কারিগর আইয়ুব আলীকে নিজের বাহিনীর অন্তত ২০ জন সদস্যকে আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে সেফ হোমে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে আনন্দ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি এমএম আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় তাদেরকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
চলতি মাসের শেষ নাগাদ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনের হাতে আত্মসমর্পণ করবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
মহেশখালী থানার আলোচিত এসআই পরেশ কারবারি হত্যাকান্ডের মূল আসামী আইয়ুব আলী দুই বস্তা অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পনে যাচ্ছে, এই খবরটি ছিল টক অব দ্যা মহেশখালী।
দুর্ধর্ষ ডাকাত ও সন্ত্রাসী আইয়ুব আলী মহেশখালীর সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে চিহ্নিত হোয়ানক কালাগাজির পাড়ার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেড় ডজনের অধিক মামলা রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের সময় আইয়ুব বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আনোয়ারসহ ৯ সদস্য আত্মসমর্পণ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় আইয়ুব।
তবে, র‍্যাব এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্যে অন্তত ৫০ বারের অধিক অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শুক্রবার বিকাল তিনটার দিকে কালাগাজির পাড়া স্টেশন থেকে একটি নাম্বার প্লেটবিহীন কালো গ্লাসের মাইক্রোতে করে আইয়ুব আলীসহ তার বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই মাইক্রোতে সাংবাদিক এমএম আকরাম হোসাইনকে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছে, আইয়ুব বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিরাপদে যাওয়ার জন্য চার ভ্যান পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।
এসময় মহেশখালী থানার ওসি প্রভাস চন্দ্র ধরকেও সিভিল পোশাকে দেখেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জলদস্যু ও ইয়াবা কারবারিদের পর এবার অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করছে অস্ত্রের কারিগর ও সন্ত্রাসীরা।
ইতোমধ্যে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার দুই ডজনের অধিক চিহ্নিত জলদস্যু, অস্ত্রের কারিগর ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্তত ১০০ জনকে সেফহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হেফাজতে থাকা লোকদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যাদের কারণে যুগ যুগ ধরে মহেশখালীর কালারমারছড়াসহ আশপাশের এলাকা অশান্ত থাকতো।
নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সেফহোমে আনা হয়েছে প্রায় ১০০ অস্ত্রের কারিগর, শীর্ষ ডাকাত, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুকে।
যাদের মধ্যে রয়েছে -মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুকুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫ জন।
চেয়ারম্যান তারেক শরীফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন, নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫ জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজউদ্দৌল্লাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মোঃ কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫/২০ জন।
গত জোট সরকারের আমলে জিয়াউর রহমান জিয়ার বাহিনী ও ছৈয়দ নূরের (নিহত) বাহিনীর মধ্যে প্রায় সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। তাদের গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। ঘরছাড়া হয়েছে হাজারো যুবক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিয়া বাহিনীর সদস্যদের আধিপত্য অনেকটা কমে যায়।
তবে, অন্তঃকোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম চৌধুরী ও চেয়ারম্যান তারেকের তুমুল বিরোধ বন্ধ হয়নি। এই দুই ক্ষমতাশালী নেতার ছত্রছায়ায় রয়ে যায় অনেক দাগি অপরাধী। সম্প্রতি তাদের মধ্যকার সেই পুরনো বিরোধের বরফ গলতে শুরু করেছে। এই দুই জনের অনুসারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পন করছে। অশান্ত এলাকাটি এবার শান্ত হবে বলে আশা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটির মধ্যস্থতা করছেন আলোচিত সাংবাদিক এমএম আকরাম হোসাইন। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উজানটিয়া মালেকপাড়ার বাসিন্দা।
এমএম আকরাম হোসাইন জানান, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার অস্ত্রের কারিগর ও শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদের টার্গেট করে এবারের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
গেলবার জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা আত্মসমর্পণের বাইরে ছিল তারাও আসার সুযোগ রয়েছে। দুই শতাধিক অস্ত্রের কারিগর, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুর সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সেখান থেকে দেড়শতাধিক লোক আত্মসমর্পনের আওতায় আসতে পারে।
২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। সেখানে ৫ বাহিনীর ৩৭ জন এমএম আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় হয়েছে।
এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, জলদস্যু, অস্ত্রের কারিগর ও সন্ত্রাসীদের অনেকে নিরাপদ জীবনে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে  ‘আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান’ হতে পারে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, সরকারের এই নমনীয় মনোভাবে জলদস্যু, সন্ত্রাসী কিংবা অস্ত্র কারিগররা চাইলে সুযোগটি নিতে পারে। আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্তা।