ইমরান হোসাইন :

হোছনে আরা (৬০)। কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা বলির পাড়া এলাকার সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা তিনি। একই উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলা পাড়া থেকে বাস্ত্যুচূত হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আবাস গড়েন তিনি। তার স্বামী মাহমুদ রশিদ দিনমজুর। তাদের সংসারে ছয় মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ইতিমধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তারা। অপর তিন মেয়ে, এক ছেলে, পুত্রবধূ ও এক নাতীকে নিয়ে তাদের বসবাস। দুই কক্ষের বাসায় গাদাগাদি করেন থাকেন তারা ৮ জন। আর কোন মেয়ে বাপের বাড়ী বেড়াতে আসলেই বিপাকে পড়তে হয় তাদের। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনরকম রাত কাটান তারা। কিন্তু অপ্রতুল বাসস্থানের এ দুটি ঘর যখন জরাজীর্ণ হয়। তখন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে আরো দূর্বিষহ।

রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদককে এমনি দূর্বিষহ জীবনযাত্রার গল্প শোনাচ্ছিলেন বাস্ত্যুহারা গৃহিণী হোসনে আরা।

হোসনে আরা বলেন, নিজের ভিটেমাটি নেই বলে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করছি। কিন্তু সরকার আমাদের জন্য সেসব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন, তা আমাদের নাগালে পৌঁছাতে পারে না। তাই আমাদের এ দূর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের জরাজীর্ণ ঘরগুলো সংস্কারে বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু নামেমাত্র কাজ করে বেশিরভাগ অর্থ লোপাট হয়ে গেছে। তাই আমাদের আর দুঃখ ঘুচে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১০ জুলাই সরকারি অর্থায়নে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ঠাঁই হয় ২০০ হতদরিদ্র পরিবারের।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোঃ ইসমাঈল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এর পাঁচটি ব্যারাকে ৫০টি ঘর, একটি মসজিদ ও তিনটি স্কুলঘর সংস্কারে ১৮লাখ ২৩হাজার ৪৭০টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়া ছাউনি ও দেয়ালের টিন পরিবর্তন ও লোহার কাঠামো পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার শুধুমাত্র ছাউনির কিছু টিন পরিবর্তন করে সংস্কারকাজ শেষ করেছেন। এতে বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেকও খরচ হয়নি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিশাল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার।

সরেজমিন দেখা যায়, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক সারিতে ১০ ব্যারাকে ১০০ করে দুই সারিতে ২০০ ঘর রয়েছে। প্রকল্পের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তিনটি স্কুলঘর, পূর্ব পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। রয়েছে ২০টি গোসলখানা ও ৮০টি সেনিটারি ল্যাট্রিন। নির্মাণ পরবর্তী এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দৃশ্যত কোন সংস্কার হয়নি। বর্তমানে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ বাসিন্দাদের মাথার ওপর ছাউনির ঢেউটিনগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে স্কুলঘর ও গোসলখানা। ঘর গুলোর অবস্থা এতই নাজুক যে বৃষ্টি হলে প্রতি ঘরে থালা বাসন পাতিল বসিয়ে দিতে হয়। তাই প্রায় সকল ঘরের চালার উপরে খড়কুটো নয়তো কালো পলিথিন দিয়ে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া প্রাণন্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাসিন্দারা। স্কুলঘর গুলোর টিনও নষ্ট হয়ে প্রায় ঝরে গেছে অনেক আগেই। এতে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্কুলগামী শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের বরাদ্দকৃত ১৮লাখ টাকার সংস্কারকাজ কোন কাজেই আসেনি আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। তাই রোদবৃষ্টিতে ২০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের এ দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। সংস্কারকাজটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পান স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী হাসানুল ইসলাম আদরের মালিকানাধীন ঠিাকাদারী প্রতিষ্টান দোহা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে এ সংস্কারকাজ যথাযথভাবে করেননি তিনি। নি¤œমানের টিন ব্যবহার ও যথাযথভাবে সংস্কার না করে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লেও প্রভাবশালী এ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা।

এব্যাপারে ঠিকাদার হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটির সংস্কারে কোন অনিয়ম করা হয়নি। সরকারী আদেশ অনুযায়ী সকল কাজ করা হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সৌভ্রাত দাশ বলেন, সংস্কার কাজটি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হবে। সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।