ইমাম খাইর,সিবিএনঃ

জলদস্যু ও ইয়াবা কারবারিদের পর এবার অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করছে অস্ত্রের কারিগর ও সন্ত্রাসীরা। ইতোমধ্যে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার দুই ডজনের অধিক চিহ্নিত জলদস্যু, অস্ত্রের কারিগর ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্তত ১০০ জনকে সেফহোমে নিয়ে আসা হয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসে তাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। হেফাজতে থাকা লোকদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যাদের কারণে যুগ যুগ ধরে মহেশখালীর কালারমারছড়াসহ আশপাশের  এলাকা অশান্ত থাকতো। গ্রুপিংয়ের কবলে পড়ে ঘটেছে অসংখ্য খুনের ঘটনা। ঝরেছে লাশ। জলদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের খেসারত হিসেবে বছরের পর বছর ফেরারী জীবন কেটেছে, এমন লোকও আত্মসমর্পণ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। তারা জীবনে আর অপরাধ করবে না বলে নিজের মাতৃভূমির মাটি ছুঁয়ে শপথ করেছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটির মধ্যস্থতা করছেন আলোচিত সাংবাদিক এমএম আকরাম হোসাইন।
এর আগে তিনি জলদস্যু ও ইয়াবা কারবারিদের পৃথক দুইটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানও মধ্যস্থতা করেছিলেন। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উজানটিয়া মালেকপাড়ার বাসিন্দা।
এমএম আকরাম হোসাইন জানান, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার অস্ত্রের কারিগর ও শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদের টার্গেট করে এবারের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
গেলবার জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা আত্মসমর্পণের বাইরে ছিল তারাও আসার সুযোগ রয়েছে। দুই শতাধিক অস্ত্রের কারিগর, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুর সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সেখান থেকে দেড়শতাধিক লোক আত্মসমর্পনের আওতায় আসতে পারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সেফহোমে আনা হয়েছে প্রায় ১০০ অস্ত্রের কারিগর, শীর্ষ ডাকাত, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুকে।
যাদের মধ্যে রয়েছে -মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুকুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫ জন।
চেয়ারম্যান তারেক শরীফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন, নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫ জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজউদ্দৌল্লাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মোঃ কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫/২০ জন।
গত জোট সরকারের আমলে জিয়াউর রহমান জিয়ার বাহিনী ও ছৈয়দ নূরের (নিহত) বাহিনীর মধ্যে প্রায় সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। তাদের গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। ঘরছাড়া হয়েছে হাজারো যুবক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিয়া বাহিনীর সদস্যদের আধিপত্য অনেকটা কমে যায়।
তবে, অন্তঃকোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম চৌধুরী ও চেয়ারম্যান তারেকের তুমুল বিরোধ বন্ধ হয়নি। এই দুই ক্ষমতাশালী নেতার ছত্রছায়ায় রয়ে যায় অনেক দাগি অপরাধী। সম্প্রতি তাদের মধ্যকার সেই পুরনো বিরোধের বরফ গলতে শুরু করেছে। এই দুই জনের অনুসারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পন করছে। অশান্ত এলাকাটি এবার শান্ত হবে বলে আশা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। সেখানে ৫ বাহিনীর ৩৭ জন এমএম আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় হয়েছে।
এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, জলদস্যু, অস্ত্রের কারিগর ও সন্ত্রাসীদের অনেকে নিরাপদ জীবনে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে  ‘আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান’ হতে পারে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, সরকারের এই নমনীয় মনোভাবে জলদস্যু, সন্ত্রাসী কিংবা অস্ত্র কারিগররা চাইলে সুযোগটি নিতে পারে। আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্তা।