এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকালে স্বামীর বাড়িতে মারা যাওয়া গৃহবধু নাছিমা আক্তার (১৮) আত্মহত্যা করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁর মা আনোয়ারা বেগম। এই ধরণের অভিযোগ তুলে তাঁর মেয়েকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে শনিবার রাতে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন তিনি।

এজাহারটিতে মেয়ের জামাতা নুরুল আমিন ও তাঁর ভাই নুরুল কবিরসহ দুইজনকে আসামি করেছেন। এজাহারে বাদি দাবি করেছেন, বিয়ের সময় কথা দেয়া যৌতুকের টাকা সময় মতো না দেয়ার জেরে তাঁর মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে খুন করেছে স্বামী নুরুল আমিন। তাকে প্ররোচনা দিয়েছে ভাই নুরুল করির। অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া গ্রামে। তাদের বাবার নাম মৃত আহমদ হোসেন মেম্বার।

মামলার আর্জিতে বাদি লামা উপজেলার ইয়াংছা এলাকার মৃত নুরুজ্জামানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৬৫) দাবি করেন, প্রায় ১০ মাস আগে তাঁর মেয়ে নাছিমা আক্তারকে সামাজিকভাবে কথাবার্তার মাধ্যমে মুসলিম আইন অনুযায়ী চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া গ্রামের নুরুল আলমের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় নুরুল আমিনকে ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়ার কথা। পরবর্তীতে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। ওই টাকায় একটি টমটম গাড়ি কিনে সংসার জীবন অতিবাহিত করছিলেন নুরুল আমিন।

বাদি আনোয়ারা বেগম এজাহারে আরো বলেন, যৌতুক বাবত বাকী ২০ হাজার টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্বামী নুরুল আমিন আমার মেয়ে নাছিমা আক্তারকে মারধর করতো। অনুরূপভাবে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর ) রাতে মাদকাসক্ত অবস্থায় বাড়িতে গিয়ে যৌতুকের ওই ২০ হাজার টাকা এনে দেয়ার জন্য প্রথমে হাঁকা-বকা করে। পরে তাকে দরজা বন্ধ করে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনার এক পর্যায়ে গলাচেঁপে ধরে শ^াসরোধ করে তাকে হত্যা করে গলায় ওড়না পেচিঁয়ে আত্মহত্যা করার মতো ঘটনা সাজিয়ে ভোরের দিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় নুরুল আমিন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির ভেতর থেকে গৃহবধু নাছিমা আক্তারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে চালার বীমের সাথে ঝুলা অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষনিক চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এলাকাবাসির অভিযোগ, স্বামী নুরুল আলম বিয়ের পর থেকে মাদক সেবনে জাড়িয়ে পড়ে। কারণে অকারণে বাড়িতে ফিরে স্ত্রী নাছিমা আক্তারকে মারধর করতো নুরুল আলম। ধারণা করা হচ্ছে, মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধু নাছিমার মৃত্যু হয়েছে।

চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) একেএম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, গৃহবধূর মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য লাশ পরিবারের কাছে হস্তানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই নারী আসলে কী আত্মহত্যা করেছে, না তাকে হত্যা করা হয়েছে এখনই বলা যাচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত রির্পোট হাতে আসলে প্রকৃত কারণ উৎঘাটন হবে। নিহতের স্বজনরা থানায় এসেছিলো একটি এজাহার নিয়ে। তবে সকালে এজাহারটি জমা দেয়ার কথা।