চট্টগ্রাম সংবাদদাতাঃ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ সংকটাপন্ন, জনগণ তাদের মৌলিম অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এবং তাবেদার শক্তি দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে ছাত্র সমাজকে ঐক্যদ্ধ হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তীব্র ছাত্র গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।

৩ নভেম্বর দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরে বাংলাদেশ আজ দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের মাস্তানীর কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগের খপ্পরে পড়ে কেউ খুনী হচ্ছে আর কেউবা খুন হচ্ছে। ছাত্রলীগ এতটাই বেপরোয়া হয়েছে যে, পিতৃতুল্য শিক্ষকগণ এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গতকালও তারা একজন অধ্যক্ষকে পুকুরে ডুবিয়েছে। অন্যদিকে যুবলীগের ক্যাসিনোকান্ড, সন্ত্রাস, মাদক আর টেন্ডারবাজির ভয়াবহতা গোটা জাতি জানে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের অপরাধের ফিরিস্তি শুনলে শরীর শিউরে ওঠে। অথচ এইসব দুর্বৃত্তদেরকেই গত সিটি নির্বাচনে সরকার ভোট জালিয়াতি করে জিতিয়ে এনেছে। এভাবে গোটা আওয়ামী পরিবারে যে ভয়ংকর অপরাধপ্রবনতা ছড়িয়ে পড়েছে তা কল্পনাতীত। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় এরা বছরের পর বছর মানুষের ওপরে অত্যাচার, নিপিড়ন করছে, সম্পদ দখল করেছে। এই দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামী পরিবারের দায় আওয়ামী লীগ প্রধান এড়াতে পারেন না। তাকে এর দায় নিয়ে দল ও সরকার থেকে পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ইসলাম, মহান আল্লাহ তায়ালা, রাসুল সা. সহ মুসলমানদের স্পর্শকাতর বিষয়ে অশ্লীল কটুক্তি করে সা¤প্রদায়িক উস্কানি দেয়া এদেশের একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভোলার বোরহান উদ্দীনে মুসলমানদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করার পর মুসলমানদের স্বভাবজাত ঈমানী প্রতিক্রিয়াকে প্রশাসন বর্বর কায়দায় দমন করে। এতে ৪ প্রাণহানী ঘটে, ৫ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, একটি মুসলিম প্রধান দেশে মুসলমানদের প্রানাধিক প্রিয় রাসুল সা. কে নিয়ে কটুক্তি করা হবে, তার প্রতিবাদ করলে গুলি করে হত্যা করা হবে আবার মামলা দিয়ে হয়রানীও করা হবে, এটা সহ্য করা যায় না। ভোলার ঘটনায় নিহত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আহতদের চিকিৎসা খরচ দিতে হবে এবং অবশ্যই গণমামলা প্রত্যাহার করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা রোধে কার্যকর আইন পাশ করতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অনতিবিলম্বে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরী করতে হবে।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শেখ ফজলুল করিম মারুফ বলেন, ছাত্র রাজনীতির নামে পেশী ও সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতি বর্তমান ছাত্র রাজনীতিকে চরমভাবে বিতর্কিত করছে। তথাকথিত ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র বান্ধব কর্মসূচির পরিবর্তে ছাত্রদের জীবন নাশের খেলায় মেতে উঠেছে। আবরার হত্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি আবরার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ সালে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বুকে ধারণ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন পথ চলা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র ও শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ইশা ছাত্র আন্দোলন সাধারণ ছাত্রদের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তিনি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে ছাত্র সমাজকে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি রিদাওয়ানুল হক শামসীর পরিচালনায় এবং সংগঠনের জয়েন্ট সক্রেটারী জেনারেল ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক নূরুল করীম আকরাম এর সভাপতিত্বে বিভাগীয় ছাত্র-সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলামা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাকী, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম ও ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ।

বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশ থেকে উত্থাপিত দাবিসমূহ :
১. ছাত্র রাজনীতির নামে পেশী শক্তির ব্যাবহার বন্ধ করতে হবে।
২. ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দীর্ঘদিন যাবত রাজনৈতিক কারণে বন্ধ থাকা নগরীর সরকারী কলেজসমূহের হোস্টেল খুলে দেওয়া ও পর্যাপ্ত হল নির্মাণ করে ছাত্র দুর্ভোগ নিরসন করতে হবে।
৪. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. কালুর ঘাট ব্রীজ পুননির্মাণ করতে হবে।
৬. নগরীতে বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয়ের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ নিরসন করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করতে হবে।
৮. নগরীতে শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বাস চালু করতে হবে।