মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন কক্সবাজারের কৃতি সন্তান রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালার কন্যা ড. প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের স্মারক নং-শিম/শা:১৮/৯চ:বি:-১/২০০৬/৩৪৮ মূলে ০৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২(২) ধারা অনুযায়ী চবি’র বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে (সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত প্যানেল হতে নিয়মিত ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ অথবা পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত) নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি ৩ নভেম্বর ২০১৯ অপরাহ্নে উপাচার্য পদে যোগদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার গত ১৩ জুন ২০১৯ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করায় মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি এম.পি. ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এম.পি.কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, নান্দনিক ও বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন জ্ঞান-গবেষণার তীর্থকেন্দ্রে রূপান্তর করতে দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় পুনঃব্যক্ত করেন। তাঁর এ পবিত্র দায়িত্ব পালনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১৯৯১ সনে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৮১ সনে এম.এ. এবং ১৯৭৮ সনে বি.এ. অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ মেধাবী-গুণী শিক্ষক-গবেষক ১৯৭৫ সনে চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৩ সনে কক্সবাজার সরকারী মহিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ সনে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

এ কৃতি গবেষকের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে গল্প, উপান্যাস ও বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ উল্লেখযোগ্য। তিনি নজরুল জন্মশত বর্ষ উদযাপন পরিষদ কর্তৃক ‘চট্টগ্রাম একুশে পদক ২০১০’ পদকসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সৌদিআরব, সিংগাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সফর করেন। উল্লেখ্য, এ গুণী শিক্ষক ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুসন্ধান কমিটির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট নাম সুপারিশ প্রদানের জন্য) সদস্য ছিলেন। তিনি নির্বাচক মন্ডলীর সদস্য হিসেবে জয়ীতার (বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী নির্বাচন) সাথে কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম রজত জয়ন্তী, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ভারত, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব অব হীরণ লাইব্রেরি, কলকাতা, ভারত-এর সদস্য ছিলেন। তিনি ‘কুচবিহার অনাসৃষ্টি’ (বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা), পশ্চিমবঙ্গ-এর উপদেষ্টা, ‘লোক বাংলা’ (লোকসংস্কৃতি বিষয়ক সাময়িকী), ঢাকা, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টার (BHRC), ঢাকা, বাংলাদেশ-এর সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে প্রকাশিত বিভিন্ন জার্ণাল, পান্ডুলিপি (গবেষণা পত্রিকা), বাংলা বিভাগ এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্বর্ণ পদক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হন।

প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১৯৫৬ সনে কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আফসার কামাল চৌধুরী এবং মাতা-মরহুমা বেগম লুৎফুন্নাহার কামাল। তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মো. লতিফুল আলম চৌধুরী। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জননী। তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর কন্যা নাজনীন সরওয়ার কাবেরী’র ননশ।

প্রসঙ্গত, অপর একটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে একইদিন চ্যাঞ্চেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাইস চ্যান্সলর (ভিসি) নিয়োগ দিয়েছেন।