নীতিশ বড়ুয়া, রামু :

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে প্রয়াত বিহার অধ্যক্ষ, সরকার কর্তৃক একুশে পদক ভুষিত, উপ-সংঘরাজ প-িত সত্যপ্রিয় মহাথের’র নির্বাণশান্তি কামনা ও এ বৌদ্ধ ভিক্ষু’র মহাপ্রয়াণের এক মাস উপলক্ষে নবপ্রতিষ্ঠিত মুচলিন্দ বুদ্ধপ্রতিবিম্ব-এর জীবন্যাস এবং অষ্টপরিষ্কারসহ মহা-সংঘদানের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার (১ নভেম্বর) দিনব্যাপী রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে আয়োজিত এ মহতী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমপি কমল বলেন, মানবজাতির মঙ্গলের জন্যই সকল ধর্মে দান করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। দানের মাধ্যমে মানুষের নির্লোভ চরিত্র ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফুটে উঠে। এ বছর (২০১৯সাল) এর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শোকাবহ পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে। কারন এই কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহরের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের আজ আমাদের মাঝে নেই। প্রতিটি অনুষ্ঠানে যেই আসনে বসে তিনি সকলকে আশীর্বাদ করতেন, সেই আসনে আজ তাঁর প্রতিচ্ছবি। পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের একজন শ্রেষ্ট মানুষ ছিলেন। তিনি অনেক গুণের অধিকারি ছিলেন বলেই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। দেশী-বিদেশী অনেক সম্মানের অধিকারী হয়েও পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক গুণি মানুষ। এমপি কমল বলেন, ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের ছিলেন আমাদের রামুবাসী তথা কক্সবাজারবাসীর প্রধানতম অভিভাবকদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। আমি সময় পেলেই তাঁর কাছে আশীর্বাদ নিতে ছুটে আসতাম। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ মানুষটির আদর্শ, তাঁর নির্দেশিত বাণী ধারণ করেই আমাদেরকে সম্প্রীতির রামু প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র আধ্যাত্বিকতার বিষয়েও স্মৃতিচারণ করে এমপি কমল আরো বলেন, পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানকে দেশের সবচেয়ে ঝাঁকজমক ভাবে উদযাপনে তিনি একজন উদযাপন কমিটির সদস্য হিসেবে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রনয় চাকমা, রামু থানার ওসি (তদন্ত) এস এম মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তরুন বড়–য়া, স্বাগত বক্তব্য রাখেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়–য়া।

দু’পর্বের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রামু উত্তর ফতেখাঁরকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথের ও চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান প্রিয়রতœ মহাথের। এতে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন, পটিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ ড. সংঘপ্রিয় মহাথের।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে আবাসিক পরিচালক, লেখক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ধর্মদেশনা করেন, চট্টগ্রাম দেবপাহাড় পূর্ণাচার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ আর্যপ্রিয় মহাথের, উখিয়া মনখালী বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ-পঞ্ঞাওয়া মহাথের, রামু শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ-চেকাচারা মহাথের, টেকনাফ হোয়াইক্যং বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ পঞ্ঞাচারা মহাথের, মহেশখালী সৈকত কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ দয়ানন্দ মহাথের, কক্সবাজার পাহাড়তলী উঃকুশল্ল্যা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্ঞানপ্রিয় থের, রামু উত্তর ফতেখাঁরকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থের, রামু ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক জ্যোতিসেন থের, শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাতিলক ভিক্ষু, হাজারীকুল বোধিরতœ বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ সৌরবোধি ভিক্ষু, পূর্বরাজারকুল সদ্ধর্মোদয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবিনয় ভিক্ষু। মহতী পূণ্যানুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেনম রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহারের আবাসিক প্রধান শীলপ্রিয় থের। পবিত্র ত্রিপিটক থেকে মঙ্গলাচরণ করেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহারের আবাসিক ধর্মপাল ভিক্ষু ও পঞ্ঞাচারা ভিক্ষু।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার পরিচালনা কমিটি ও গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও বড়–য়া পাড়া যুব সমাজ আয়োজিত পুণ্যায়োজনের দাতা ছিলেন রামু হাইটুপী গ্রামের প্রয়াত কাশি মোহন বড়–য়ার পরিবারবর্গ। অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক, ফতেখাঁরকুলের সাবেক মেম্বার অরূপ বড়–য়া কালু, অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির আহবায়ক তপু বড়–য়া, সদস্য সচিব ছোটন বড়–য়া ও অর্থ সচিব মিমু বড়–য়া জানান, রাঙ্গামাটি’র পঞ্চাশ সদস্যের একদল তাতঁশিল্পী বিহার প্রাঙ্গনে আগের দিন বৃহষ্পতিবার বিকাল থেকে চীবর বুনন শুরু করে শুক্রবার বিকালের মধ্যে সম্পন্ন করে ভিক্ষুসংঘকে কঠিন চীবর দান করা হয়। তাঁরা জানান, দুই দিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো বৃহস্পতি বার রাতে বুদ্ধ কীর্তন, শুক্রবার ভোরে বিশ্বশান্তি কামনায় পবিত্র ত্রিপিটক থেকে সুত্রপাঠ, বুদ্ধপুজা, সকালে ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, নবপ্রতিষ্ঠিত মুচলিন্দ বুদ্ধ প্রতিবিম্ব’র জীবনন্যাস, সংঘদান, অষ্টপরিস্কারদান, ধর্মসভা, অতিথি ভোজন, চীবর ও কল্পতরু সহকারে গ্রাম প্রদক্ষিন, দানোত্তম কঠিন চীবর দানসভা, চীবর পরিক্রমা, কঠিন চীবর ও কল্পতরু উৎসর্গ ও বিশ্বমান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। ধর্মসভায় শতাধিক প্রাজ্ঞ ভিক্ষুসংঘ, শ্রামন ও হাজারো পূন্যার্থী উপস্থিত ছিলেন।### ###