ডেস্ক নিউজ:

‘পিয়াসাকে আমার কাছ থেকে সরাতে রাজধানীর বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে মেয়ে সাপ্লাই দিয়েছেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। আমি কোনো ধর্ষণ করিনি। আমি ধর্ষণ মামলার আসামিও না। একমাত্র পিয়াসাকে ভালোবেসে বিয়ে করা আমার অপরাধ।’

গত ডিসেম্বরে জামিনে বের হন বনানীর রেইনট্রি মামলার অন্যতম আসামি সাফাত আহমেদ। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতালে বাবা দিলদার আহমেদের সঙ্গে এসব কথা বলেন সাফাত। এ সময় তিনি সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। ভিডিওতে দুজনের কথাকাটাকাটি হয় এবং একে অপরকে লক্ষ্য করে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।

এদিকে আজ বুধবার গর্ভের সন্তান নষ্ট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদসহ দুজনের করা মামলার নারাজির বিষয়ে শুনানি শেষে তা সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার বাদী পিয়াসা বলেন, ‘আমার শ্বশুর দিলদার জঘন্য একজন মানুষ। তিনি আমাদের সংসার ভালোভাবে চলতে দিচ্ছেন না। সাফাতকে নারী দিয়ে তিনি ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া আমার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। তা ভিডিওর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।’

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলার নারাজি শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার বাদী রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের স্ত্রী ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। পরে তার আইনজীবীরা সময় আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৩০ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন।

তার আগে ২৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলায় নারাজি দেন ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা। আদালত নারাজির ওপর শুনানির জন্য ১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। সেদিন ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গর্ভের সন্তান নষ্ট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করি। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান আমার কাছে অবৈধভাবে টাকা দাবি করেন। আমি তার দাবি না মানায় তিনি আমার শ্বশুরের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আমি এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছি।’

এর আগে গত ২৮ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে দিলদারের পুত্রবধূর দায়ের করা মামলার সত্যতা খুঁজে পাননি বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দিলদার আহমেদ সেলিম এবং আপন রিয়েল এস্টেটের পরামর্শক ও তত্ত্বাবধায়ক মো. মোখলেসুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

১১ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আবেদনে আপন রিয়েল স্টেটের উপদেষ্টা মোখলেছুর রহমানকেও আসামি করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা বলেন, ‘সাফাতের সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুরের পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে বসবাস করে আসছিলাম। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর দিলদার আহমেদ আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। আমাকে তালাক দেয়ার জন্য সাফাতকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতেন। তালাক না দিলে তাকে ত্যাজ্যপুত্র ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেন।’

তিনি বলেন, ‘সাফাত বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর গত ৩১ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। এরপর তাকে নির্যাতনের বিষয়গুলো অবহিত করি। এতে আমার শ্বশুর আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হন। আমি আর সাফাত একসঙ্গে বসবাস করা অবস্থায় ১৩ ফেব্রুয়ারি তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তিনি জেলে যাওয়ার পর দিলদার আহমেদ ও তার সহযোগী মোখলেছুর রহমান আমাকে নির্যাতন করতে থাকেন।’

পিয়াসা আরও বলেন, ‘৫ মার্চ নিয়মিত গাইনি ডাক্তার দেখানোর অংশ হিসেবে এবং সাফাতের কোর্টে হাজিরা থাকায় তাকে (সাফাত) দেখার উদ্দেশে রাত ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হই। দুই ঘণ্টা পর কেনাকাটা শেষে বাসার গেটে প্রবেশ করা মাত্র শ্বশুর ও তার সহযোগী মোখলেছুর রহমান আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।’

তিনি বলেন, ‘এ সময় আমার কাছে থাকা দুই লাখ টাকা, গলায় থাকা পাঁচ ভরি স্বর্ণের নেকলেস, হাতে থাকা দুই ভরি স্বর্ণের চুড়ি ও দুটি হীরার আংটি (যার বাজারমূল্য ৮ লাখ টাকা) জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন। আমি বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে শ্বশুর আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন, তা নাহলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন।’

গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার চেষ্টা করেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার-এ প্রসঙ্গে পিয়াসা বলেন, “আমি দুই মাসের গর্ভবতী ছিলাম। গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তলপেটে লাথি মারার চেষ্টা করেন এবং ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন তিনি। পরদিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গেলে তিনি (দিলদার) বলেন, ‘আমার বাড়িতে কখনও প্রবেশ করলে তোকে জানে শেষ করে দেব। এরপর চড়-থাপ্পড় মেরে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেন।”