ডেস্ক নিউজ:
ক্রিকেটারদের আন্দোলন ও ধর্মঘটের প্রাথমিক অবস্থায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তথা বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা হার্ডলাইনে চলে যাওয়ায় হঠাৎই অশান্ত হয়ে পড়েছিল দেশের ক্রিকেট। প্রায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল ক্রিকেটারদের সকল ক্রিকেটীয় কার্যক্রম। শেষপর্যন্ত ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে কেটেছে আকাশে জমা মেঘের ঘনঘটা।

কমেছে দেশের ক্রিকেটের অস্থিরতা, আন্দোলনও হয়েছে প্রশমিত। ক্রিকেটাররা বিরতি শেষে মাঠে ফিরেছেন। শুক্রবার ভারত সফরের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে নির্বিঘ্নে। সব বিদেশি কোচরাও চলে এসেছেন, স্পিনারদের নতুন গুরু ড্যানিয়েল ভেট্টরিও রাজধানীতে পৌঁছার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

সব মিলে, বৃষ্টিভেজা বিকেলেও জাতীয় ক্রিকেটারদের কলতানে আবার মুখর হয়ে উঠেছিল শেরে বাংলা। তামিম, মুশফিক, রিয়াদসহ ভারত সফরের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে থাকা সব ক্রিকেটার অনুশীলনে যোগ দিলেও, প্রথম দিনের অনুশীলনে ছিলেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার এই না থাকা নিয়েই জেগেছে প্রশ্ন!

আচ্ছা, এত আন্দোলন-ধর্মঘটের পর বোর্ডের সঙ্গে বসে আপোসও হলো। সাকিব নিজেই বললেন আলোচনা ফলপ্রসূ, আমরা আবার মাঠে ফিরছি। কিন্তু তারপর ভারত সফরের প্রস্তুতির প্রথম দিন, সে অধিনায়কই নেই প্র্যাকটিসে। কেনো? সদুত্তর মেলেনি, কেউ ঠিক পরিষ্কার করে বলতে পারেননি কেনো অনুশীলনে আসেননি সাকিব।

দুইরকম কথা শোনা গেছে, কেউ কেউ বলেছেন শরীর খারাপ, ঠান্ডা লেগেছে তাই অনুশীলনে যোগ দেননি সাকিব। আবার অন্য কথাও আছে। কেউ কেউ বলছেন গ্রামীণফোনের সঙ্গে মোটা অঙ্কের চুক্তি করে বিপাকে পড়েছেন সাকিব। সাকিবের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। কিন্তু সেটি বোর্ডকে না জানিয়েই। তা নিয়েই বোর্ডের অসন্তোষ। সে অসন্তোষ মেটাতেই নাকি শুক্রবার অনুশীলনে যোগ দেননি সাকিব।

বোর্ডের ভেতরের ওই অসন্তোষ প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে নাজমুল হাসান পাপনের কথায়। দেশের এক শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রীতিমতো সাকিবের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিসিবি সভাপতি। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তিটি বোর্ডের নিয়ম মেনে হয়নি। সে কারণেই সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন, বোর্ড লিগ্যাল অ্যাকশনে যাবে।

যার ধারাবাহিকতায় সাকিবের কাছে প্রথমে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। পুরো বিষয়টি বোর্ডের সঙ্গে থাকা চুক্তির নিয়ম মেনে হয়েছে কি না তা খুঁটিয়ে দেখা হবে। এ বিজ্ঞাপনে চুক্তির বরখেলাপ ঘটলে সাকিবের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করবে বোর্ড। পাশাপাশি গ্রামীণফোনকেও লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন বিসিবি বিগ বস।

উল্লেখ্য, বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া যেকোনো ক্রিকেটারের বিজ্ঞাপন বা নতুন কোনো চুক্তিতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ক্রিকেটারদের বলে দেয়া আছে, টিম স্পন্সরদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো চুক্তিতে যাওয়া যাবে না। একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সে কারণেই নাকি তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞাপনের চুক্তি করতে পারেননি।

সূত্র জানিয়েছে, তামিম গ্রামীণফোন ও মুশফিক রবির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েছেন। অনুমোদন না পাওয়ায়, তামিম-মুশফিক বিজ্ঞাপনের চুক্তি না করলেও, সাকিব আল হাসান বোর্ডকে না জানিয়ে হঠাৎ সোমবার গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছেন। তাতেই চটেছেন বিসিবি সভাপতি।

সে কারণেই সাকিবের সঙ্গে গ্রামীণফোনের চুক্তি নিয়ে তার মুখে অমন কথা, ‘আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করব এখন। সেটি কম্পানির কাছেও দাবি করব, দাবি করব খেলোয়াড়ের কাছেও। আমরা কি ছেড়ে দেব নাকি? কালকে (গত পরশু) শুনলাম প্রথম। আমি বলে দিয়েছি, গ্রামীণফোনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাও। বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাও। বলেছি, চিঠি পাঠাও সাকিবকেও। আমাদের ব্যাখ্যা চাই। সে আইন ভঙ্গ করে গেল কেন? এখন সে যদি দেখাতে পারে যে আইন ভঙ্গ করেনি, ওকে তো বলার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের কাছে ব্যাপারটিকে মনে হয়েছে, বোর্ডের কোনো নিয়ম-কানুন মানি না। এ রকম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবই।’

তার মানে গ্রামীণফোনের সাথে সাড়ে তিন টাকার বিজ্ঞাপন চুক্তি করে বিপাকে সাকিব। বোর্ড অনিবার্যভাবে তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিবে এবং তাকে অবশ্যই সে চিঠির জবাব দিতে হবে। তার মানে আবার উত্তেজনা। দেখা যাক, ভারত সফরের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনের আগে সাকিবের ও বোর্ডকর্তারা বিষয়টিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন?