মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) :

আলীকদম উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজির সরঞ্জাম ভাংচুর, সরকারি কাজে বাধা ও চাঁদা দাবীর অভিযোগে মামলা হয়েছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মামলার পর গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলার প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু করেছেন।

থানায় প্রদত্ত এজাহার ও মামলার বাদী সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে বারোটায় আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজিতে কর্মরত ছিলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবঃ) মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান। এ সময় উপজেলার চৌহুমুনীর অরুন বিকাশ দত্তের ছেলে হিল্লোল দত্ত ২/৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে প্যাথলজিতে ঢুকে কোন কথাবার্তা ছাড়াই ফ্রিজ খুলে রি-এজেন্ট (রক্ত পরীক্ষার কেমিকেল) নিয়ে যেতে চাইলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাহফুজ বাধা দেয়। এ সময় হিল্লোল দত্ত উত্তেজিত হয়ে ‘এগুলি ফ্রিজে জমা রেখেছেন কেন’ বলে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে হিল্লোল দত্ত প্যাথলজি কক্ষে থাকা ব্লাড গ্রুপিং রি-এজেন্ট ২ সেট, মাইক্রোপিপেট ১টি, ইউরিন সুপার রি-এজেন্ট ১ বোতল সরকারি চিকিৎসা সরঞ্জাম ভাংচুর করে।

এজাহারো আরো প্রকাশ, অভিযুক্ত হিল্লোল একজন বেকার ল্যাব টেকনিশিয়ান। চৌমুহুনীতে তাদের মালিকানাধীন জমিতে সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ নিয়ে প্যাথলজি ব্যবসা চালু করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাহফুজকে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এতে টেকনোলজিস্ট মাহফুজ রাজি হননি। এরপর মাহফুজের কাছ থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে হিল্লোল দত্ত । অন্যথায় তার বিরুদ্ধ পত্রিকায় দুর্নীতির লেখালেখি করবে মর্মে হুমকী দেয়!

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ল্যাবে সন্ত্রাসী ঘটনার জের ধরে গত ২ দিন অনেক রোগী ল্যাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে পারেনি। এতে গরীব রোগীদের চিকিৎসা কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

থানায় পাঠানো একপত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান যে এজাহার দিয়েছেন তা যথাযথ ও সঠিক। অভিযুক্তরা সরকারি সম্পদ ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন, সরকারি কাজের ব্যাঘাত, কর্মচারীদের কাজের সময় ঘুরঘুর করে বিড়ম্বনা সৃষ্টিসহ হুমকী-ধমকীর অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। এ পত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জোন কমা-ার, সিভিল সার্জন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র কাছে।

ইউএইচএন্ডএফপিও জানান, অভিযুক্ত হিল্লোল দত্তসহ কয়েকজন যুবক কিছুদিন ধরে নিজেদের ‘সংবাদকর্মী’ পরিচয় দিয়ে সরকারি হাসপাতাল এলাকায় প্রায়সময় ঘুরঘুর করে আসছে। হাসপাতালের নানা বিষয় নেগেটিভভাবে অনলাইনে প্রচার করা হচ্ছে। হাসপাতাল নিয়ে পজেটিভ অনেক বিষয় থাকলেও তা প্রচার করে না। এ গ্রুপের একজন গত সোমবার হাসপাতালের প্যাথলজি কক্ষের সরকারি সম্পদ নষ্ট ও সংশ্লিষ্টদের হুমকী দিয়ে চলে আসার পর কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় উল্টো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাহফুজের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগা-া ছড়ায়। তাদের আচরণে সরকারি কর্মচারী ও ডাক্তারদের স্বাভাবিক কাজে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।

জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী রকিক উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজি কক্ষে ভাংচুরের ঘটনায় একজনোর নামোল্লেখসহ আরো ২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। মামলা নং- ০২, তারিখ: ২৩/১০/২০১৯। ধারা- ৪৪৭/১৮৬/৩৫৩/৪২৭/৫০৬(দঃবিঃ)। এতে সরকারি কাজে বাধা ও চাঁদা দাবীর অভিযোগ রয়েছে।