আনছার হোসেন

কক্সবাজারের অন্যতম উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়া। এই কিছুকাল আগেও এলাকাটি উপজেলা ছিল না। ছিল চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত কয়েকটি ইউনিয়ন মাত্র। ছিল না পাকা রাস্তা। হাঁটু কাদামাটিতে পা ডুবিয়ে চকরিয়া থেকে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন কিংবা অন্য ইউনিয়ন গুলোতে যেতে হতো। সেই অবহেলিত, বঞ্চিত আর জমিদারিপ্রথায় নিমজ্জিত এলাকাগুলোকে একত্র করে ‘পেকুয়া উপজেলা’য় রূপ দিয়েছিলেন এই জনপদের সূর্যসন্তান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সেই কাদামাটির রাস্তা পেরিয়ে ‘পেকুয়া’ উপজেলার আড়ম্বরপূর্ণ উদ্বোধন করিয়েছিলেন সেই সালাহউদ্দিনই।

নতুন উপজেলা, নতুন প্রশাসন। কোথাও কিছু নেই। সবকিছু শূণ্য থেকে শুরু করেছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। আর মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে গ্রামের সেই কাদামাটির অলিগলিতে যেন ‘জাদুরকাঠি’ ছুঁইয়ে বদলে দেয়া হয় সবকিছু। মাত্র ক’বছরে পেকুয়ার প্রতিটি রাস্তা ও গলিপথ হয়ে উঠে কংক্রিট আর বিটুমিনে পুরোদস্তুর সড়ক, যেন প্রতিটি অলিগলি হয়ে উঠেছে মহাসড়ক!

উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, রাস্তা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, আঞ্চলিক মহাসড়ক, এমনকি সাধারণ মানুষের সবকিছুই হাতের নাগালে নিয়ে আসেন সালাহউদ্দিনআহমদ।

আজকের যে পেকুয়া সে তো সালাহউদ্দিন আহমদের ‘সন্তান’! তিনিই জন্ম দিয়েছেন, তিনিই আদর-যত্নে বড় করে তুলেছেন!

শুধু কী পেকুয়া! না, তাঁর সংসদীয় এলাকা চকরিয়াসহ পুরো জেলাজুড়েই ছিল উন্নয়নে বিনির্মাণে নিজের হাতের ছোঁয়া। তাও শেষ নয়। নিজের সংসদীয় এলাকার বাইরে পুরো জেলাতেই বড় বড় উন্নয়নগুলো ছিল সালাহউদ্দিন আহমদেরই হাতেগড়া। দেশ তো পেয়েছে আরও অনেককিছু।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে সরকার। পাল্টে গেছে দেশের পরিস্থিতি। সালাহউদ্দিন আহমদও মন্ত্রীত্বের পাঠ চুকিয়ে হয়ে যান বিএনপি নামের দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। একসময় বেগম খালেদা জিয়া আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে দেশের রাজনৈতিক দুঃসময়ে দায়িত্ব দেন দলটির ‘মুখপাত্র’ হিসেবে।

বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকালেই আন্দোলনমুখী বার্তা দিয়ে সেই সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেন। একসময় আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে একদল সাদা পোষাকধারি অস্ত্রধারির হাতে ‘অপহৃত’ হন। সেই সময় সরকারের কোন দপ্তরই তাঁর গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। সেই যে ‘গুম’ হলেন, কেটে গেলো টানা দুইমাস দুইদিন।

‘গুম’ হওয়ার দুইমাস দুইদিন পর ভারতের শীতল পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরের গলফ লিংক মাঠে রাতের আঁধারে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয় তাঁকে। দুইমাসের দাঁড়ি-গোফ না কাটা সেই সালাহউদ্দিন আহমদকে মনে হচ্ছিল ‘উ™£ান্ত’ কোন মানুষ! শিলং পুলিশও বিশ^াস করেনি, তিনিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও একজন সাবেক মন্ত্রী! ‘পাগল’ মনে করে ভর্তিও করে দেয়া হয়েছিল মানসিক হাসপাতালে!

কক্সবাজারের প্রিয়মুখ, উন্নয়নের কারিগর নামে পরিচিতি পাওয়া সালাহউদ্দিন আহমদ সেই থেকে শিলং শহরে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে। আইনি জটিলতায় আসতে পারছেন না দেশে। নিজের মেয়ের বিয়েতেও হাজির থাকতে পারেননি যিনি।

তিনি সেই সালাহউদ্দিন আহমদ, যাঁকে কক্সবাজার জেলার মানুষ মনে করেন- কক্সবাজার জেলা তথা পেকুয়া-চকরিয়ার জন্য তিনি যা করে গেছেন আমৃত্যু মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি বানিয়ে যাবেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ পেকুয়া-চকরিয়া, কক্সবাজার জেলা, পর্যটন শিল্প, সড়ক যোগাযোগ, দেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তথা দেশের জন্য কী কী করেছেন সেই ফিরিস্তি এখানে দিয়ে পাঠকদের ধৈর্য্যচুতি ঘটাতে চাই না। এ নিয়ে আরও অনেক লেখা হতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমদের হাতেগড়া সেই পেকুয়ায় এখন ‘ভাংচুর’ চলছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত সালাহউদ্দিন আহমদের উন্নয়নের ‘ভিত্তিফলকে’ হাত দিয়েছেন ‘তারা’! পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, রাবারড্যাম, প্রতিষ্টানের ভিত্তিফলক, উদ্বোধনের ফলক ভেঙ্গে দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের নাম মুছে ফেলতে চাইছে কেউ কেউ!

যখন সালাহউদ্দিন আহমদ দেশের মাটিতে নেই, মিথ্যা অনুপ্রবেশ মামলায় বেখসুর খালাস পেয়েও যিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, সেই সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কেউ কেউ হয়তো সালাহউদ্দিন আহমদের নামের ভিত্তিফলক ভেঙ্গে দিয়ে ‘সুযোগ’ নিতে চাইছেন! ভিত্তিফলক ভাঙলেই কী একজন মানুষকে মুছে ফেলা যায়? যেখানে তিনি পেকুয়া উপজেলার জন্মদাতা। যিনি জন্ম দেন তিনিই তো জনক। নিজের বাবাকে কী সন্তানরা অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেন? কখনোই না।

একজন নিবেদিতপ্রাণ জাতীয়তাবাদী কর্মী ইউসুফ বদরী। চকরিয়া-পেকুয়ার ওই ভিত্তিফলক ও অপকর্ম দেখে অন্তর জ্বলছে তারও। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কেউ বা কারা যদি মনে করেন- একজন সালাহউদ্দিন আহমদকে মুছে ফেলা যায়, তারা আদতেই ভুলের মধ্যেই আছেন।

পেকুয়া ও চকরিয়ার সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীদের বিশ্বাস, ভিত্তিফলক ভেঙে পেকুয়ার জন্মদাতা, উন্নয়নের কারিগরকে মুছে ফেলা যাবে না।

লেখক : আনছার হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান, দৈনিক সৈকত এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, কক্সবাজার ভিশন ডটকম।