ইমরান হোসাইন, পেকুয়া :

পেকুয়া উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসাসমূহের পাঠ্য বইয়ের সরকারি গুদাম বানানো হয় পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশনের কয়েকটি কক্ষ। আর এই কক্ষের চাবি থাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের হাতে। এমন অবস্থায় সরকারি গুদাম থেকে ভাঙারির দোকানে পাঠ্যবই বিক্রি করা হয়েছে অন্তত চারবার। এরমধ্যে ধরা পড়েছে মাত্র একবার। এই ধরাধরি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যায় একজন সহকারী বাবুর্চির (অস্থায়ী) বিরুদ্ধে। তিনি জিএমসি ইনস্টিটিউশনের চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সব দায় তাঁর ওপর চাপিয়ে দিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যদের বাঁচানো হয়েছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।

তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সহকারী বাবুর্চি ইসমাইল হোসেন সরকারি গুদামের পাঠ্যবই বিক্রি করেছেন। এই প্রতিবেদনের পর ইসমাইলকে বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে পেকুয়া উপজেলার সচেতন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। মূলত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (অস্থায়ী) ইসমাইলকে বলি দিয়ে সরকারী পাঠ্যবই বিক্রির হোতা জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে রক্ষা করা হয়েছে দাবি করেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা দুর্নীতি পরায়ন এ শিক্ষকের অপসারণ দাবী তুলেছেন।

এছাড়া সচেতন মহলের প্রশ্ন, জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের হাতের চাবি কিভাবে ইসমাইলের হাতে গেল? মূলত টাকায় ম্যানেজ হয়ে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বইয়ের গুদামটি তো জিএমসির নয়। সেটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের। কিন্তু জিএমসি স্কুলের কর্মচারীর হাতে কেন এর চাবি গেল ?

উল্লেখ্য গত ১০ অক্টোবর সকালে পেকুয়া সদরের চৌমুহনী স্টেশনের আজম উদ্দিনের ভাঙারির দোকান থেকে ২৯০ কেজি পাঠ্যবই উদ্ধার করা হয়। এ উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন পেকুয়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার উলফাত জাহান চৌধুরী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত এ ঘটনা তদন্তের জন্য উলফাত জাহান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন।

অভিযানের সময় আজম উদ্দিনের ভাঙারির দোকানের কর্মচারীরা সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উলফাত জাহান চৌধুরীকে জানান, এর আগেও তিনবার তাঁরা পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন থেকে পাঠ্যবই কিনেছেন। তবে তাঁরা জানতেন না এটি অপরাধ। কিন্তু ইউএনও’র কাছে উলফাত জাহান চৌধুরীর দাখিল করা প্রতিবেদনে মাত্র একবার বই বিক্রির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এজন্য বাবুর্চি সহকারী ইসমাইলকে দায়ী করে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে দায় হতে অব্যহতি দেওয়া হয়। জহির উদ্দিনকে দায় হতে অব্যহতি দেওয়ার ঘটনায় অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে জহির উদ্দিন বলেন, বই বিক্রি করাটা অপরাধ। তবে আমি জড়িত নই। আমি কর্মচারীদের হাতে চাবি দিয়েছিলাম। তাঁরা আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। কয়েকদিন আমি ভাইয়ের ছেলের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ সুযোগে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। অন্য তিনবার বই বিক্রির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমি জানতাম না।

এদিকে গত বুধবার পেকুয়া মডেল সরকারি জিএমসি ইনস্টিটিউশন পরিচালনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পেকুয়ার ইউএনও ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাঈকা সাহাদাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে তিরস্কার ও বাবুর্চির সহকারী ইসমাইলকে বরখাস্ত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ইউএন সাঈকা সাহাদাত বলেন, সরকারী পাঠ্যবই পাচারের ঘটনায় দায় স্বীকার করায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (অস্থায়ী) ইসমাইলকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।