শাহেদ মিজান, সিবিএন:
২০১৮ সালে রামুর সবচেয়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিলো জোয়ারিয়ানালার অন্ত:স্বত্ত¡া গৃহবধূ রোজিনা হত্যা। তাকে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে লাশ পুঁতে ফেলেছিলো। পরে লাশ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। এই নৃশংস হত্যার ঘটনাটি রামুতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিলো। আলোচিত হয়েছিলো সর্বত্র। ঘটনার পর থেকে অভিযোগ ছিলো পুলিশ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করছিলো না। এই নিয়ে দীর্ঘদিন প্রশাসনসহ বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলো নিহত রোজিনার দিনমজুর বাবা। কিন্তু আসামী গ্রেফতারে কোনো সহযোগিতা পায়নি। তবে গ্রেফতারতো দূরের কথা; এবার মামলার পাঁচ আসামীর চারজনকেই চার্জসীট থেকে বাদ অব্যহতি দিয়ে দিলো তদন্ত কর্মকর্তা। পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে এই চার আসামীকে বাদ দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ বাদির।

তথ্য মতে, ২০১৭ সালে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নূরপাড়া রাবার বাগান এলাকায় মৃত আবদুল ওয়াহিদের পুত্র ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত জাহাঙ্গীর আলম মিঠু রোজিনা আকতারকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করেছিলো। রোজিনার দিনমজুর বাবা জাফর আলম দরিদ্র হওয়ায় তাতে কোনো বাধা দিতে না পেরে সামাজিকভাবে মেনে নেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন যেতেই ইয়াবা বিক্রির পুঁজির জন্য রোজিনাকে বাপের কাছ থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। টাকা এনে না দেয়ায় রোজিনার উপর নির্যাতন শুরু করে। এভাবে দীর্ঘ দিন ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয় রোজিনাকে। এমনকি জাহাঙ্গীর আলম মিঠুর ভাইয়েরাসহ পরিবারের সদস্যরাও মারধর করতো। এর অংশ হিসেবে গত ২০১৮ সালের ৪ জুলাই দুপুরে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম মিঠু আট মাসের অন্ত:স্বত্ত¡া রোজিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এসময় জাহাঙ্গীরের ভাই শহিদুল আলম, লোকমান হাকিম, মো. আয়াছ ও জানে আলম ভুট্টোও মারধর করে। এতে রোজিনা নির্মমভাবে মৃত্যু বরণ করে। মৃত্যুর পর তার লাশ বাড়ির অদূরে পাহাড়ের ঢালুতে পুঁতে ফেলে। রোজিনার হত্যার ঘটনায় পিতা বাদি হয়ে জাহাঙ্গীর আলম মিঠুকে প্রধান আসামী করে ও ভাইদের আসামী করে রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু পুলিশকে ম্যানেজ করে হত্যার পরদিন থেকেই প্রকাশ্যে চলাফেরা করে আসছিলো আসামীরা। মূল ঘাতক মিঠুও রহস্যজনকভাবে এলাকায় বীরদর্পে অবস্থান করে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। এই নিয়ে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েও সহযোগিতা পাননি রোজিনার পরিবার। উল্টো নানাভাবে হয়রানি হয়েছেন।

বাদির অভিযোগ, রোজিনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ ছানা উল্লাহ মামলা চার্জসীট দিতে নানা গড়িমসি করেছেন। তিনি চার্জসীট দেয়ার জন্য থেকে শুরু থেকেই বাদির কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু দিনমজুর জাফর আলমের পক্ষে এতো বিপুল অংকের টাকা দেয়া সম্ভব ছিলো না। তদন্ত কর্মকর্তাকে খরচের জন্য কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কম হওয়ায় তা নেননি ওই কর্মকর্তা। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে আসামীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে চার্জসীট থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। সেই মোতাবেক পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলার প্রধান ছাড়া বাকি চার আসামী শহীদুল ইসলাম, লোকমান হাকিম, মোঃ আয়াছ ও জানে আলম ভুট্টুকে থেকে অব্যহতি দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামু থানা থেকে সদ্য বদলিকৃত উপ-পরিদর্শক (বর্তমানে মহেশখালী থানায় কর্মরত) ছৈয়দ ছানা উল্লাহ। চারজনই মুল ঘাতক স্বামী জাহাঙ্গীর আলম মিঠুর ভাই। এই চার আসামীকে অব্যাহতি দিয়ে একমাত্র প্রধান আসামীকে রেখে চার্জসীট দাখিল করেছেন তিনি। চার্জসীট থেকে অব্যহতি পেয়ে ওই আসামীরা বর্তমানে বীরদর্পে ঘুরে বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে- অভিযোগ বাদির। এতে চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন রোজিনারের পরিবারের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে নিহত রোজিনার বাবা মামলার বাড়ি জাফর আলম বলেন, আমার মেয়েকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। তাকে খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে পাষÐ ঘাতকেরা। কিন্তু আসামীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বহু কষ্ট করেছি; বহু জায়গায় ধর্ণা দিয়েছি দিনের পর দিন। কিন্তু কোথাও সহযোগিতা পায়নি।

তিনি বলেন, আশাহত হয়ে শেষ আস্থা ছিলো আদালতের উপর। আশা করেছিলাম আদালতেই সুষ্ঠু বিচার পাবো। সব ঘাতকের একদিন বিচার হবে। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামীদের মামলা থেকে অব্যহতি দিয়ে সে পথও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তবে আমি দমে যাবো না। পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতে নারাজি দিবো। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চা-ই চাই।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে, তদন্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ ছানা উল্লাহ ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ না পাওয়ায় চারজনকে চার্জসীট থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’