আবদুল মালেক,রামু :
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নান্দনিক উপজেলা রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে রামু ফকিরা বাজারের পূর্ব পাশে বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হল কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব।
১৪ অক্টোবর সোমবার বিকাল দুই ঘটিকা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই জাহাজ ভাসা উৎসব। জাহাজ ভাসা উৎসবকে কেন্দ্র করে রামুর বাঁকখালী নদীর চর পরিণত হয় হাজারো মানুষের মিলনমেলায়। সেখানে জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমাগম ঘটে।
জাহাজ ভাসা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর ও রামু আসনের  সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, রামু সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র।রামুর বাঁকখালী নদীতে প্রবারণা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে আবহমানকাল থেকে এই জাহাজ ভাসা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকের কাছে এই দিনে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।এই জাহাজ ভাসা উৎসবে সব ধর্মের মানুষ উপস্থিত হয়।এই উপস্থিতি প্রমাণ করে রামু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্বর ভূমি। তিনি আরো বলেন,রামুতে যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চেয়েছিল তারা আজ হারিয়ে গেছে।তাদের কোন স্থান রামুর বুকে হবেনা।
এর আগে বিকেলে এই উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন কক্সবাজারের মাননীয় জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন।তিনি বলেন,বর্তমান সরকার সব ধর্মের মানুষের উৎসব পালনে জোর দিয়েছেন।সবাই যাতে নির্বিঘ্নে সবার উৎসব পালন করতে পারে সেজন্যে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।তিনি ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা,সহকারী কমিশনার ভূমি চাই থোয়াইহলা চৌধুরী, এটি এন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নি সাহা,বৌদ্ধ ধর্মীয় ট্রাস্টের সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া,রামু থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের, ওসি তদন্ত মিজানুর রহমান, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম,রাজারকুল চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, গর্জনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তরুণ বড়ুয়া, বাবুল শর্মা,পলক বড়ুয়া আপ্পু,সন্তোষ বড়ুয়া সহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘটনের নেতৃবৃন্দ।রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব ২০১৯ এর সাধারণ সম্পাদক মিথুন বড়ুয়া বোথামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাবু স্বপন বড়ুয়া ও সভাপতিত্ব করেন রামু কেন্দ্রীয় প্রবারনা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসবের সভাপতি রিগ্যান বড়ুয়া।
কল্প জাহাজগুলো বাঁশ, বেত, কাঠ, কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে ঈগল, ময়ূর, চূড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তৈরী করা হয়েছে জাহাজ। সেটিকে ধর্মীয় ভাসায় বলা হয়ে কল্প জাহাজ। নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচে, গানে যেন উচ্ছ্বাস। আর এ উচ্ছ্বাসের মধ্যে বাকঁখালী নদীতে ভাসানো হয় জাহাজ সমূহ।
এটিকে ঘীরে নদীর দুই পারে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভীড় ছিলো। এটি বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব হলেও সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। এটিকে সম্প্রীতির এক নতুন বন্ধন রচনা বলে মত তাদের।রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধদের জাহাজ ভাসা উৎসবে এমনি অন্যরকম উচ্ছ্বাস থাকে প্রতিবছর। এবারের ধর্মীয় সেই উচ্ছ্বাসে যোগ দিয়েছিল সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত ব্যতিক্রমধর্মী এই উৎসবে নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচে-গানে আনন্দে মেতে ওঠে সবাই।
বৌদ্ধ নেতারা জানান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সূত্র পাঠ শেষে দুপুর দুইটার দিকে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে চলে এই আনন্দ আয়োজন। তারা আরো জানান, এ বছর রামু উপজেলার মেরংলোয়া কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার, পূর্ব রাজারকুল, পূব মেরংলোয়া, দ্বীপ শ্রীকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী, রাখাইন পাড়া বড় ক্যাং এলাকা থেকে মোট দশটি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়।
এবার জাহাজ ভাসা উৎসবের ব্যতিক্রম আয়োজন ছিল প্রয়াত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের’র স্মরণে হাজারো মোমবাতি জ্বালিয়ে তার স্মরণে তা বিসর্জন দেয়া।পরে অতিথি বৃন্দ সহ ফানুস উত্তোলন করেন।
ফানুস উত্তোলন ও সম্প্রীতির কল্পজাহাজ উৎসব উপলক্ষে ২দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সূচীর মধ্যে ছিল বুধবার প্রথমদিন বুদ্ধপূজা, ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্টশীল গ্রহণ, ধর্মদেশনা, দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সমবেত প্রার্থনা ও বৃহস্পতিবার ২য় দিন পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ, জাহাজ ভাসা উৎসবের উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ।