এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া :

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর শহরে আবারো দিনদুপরে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ছিনতাইকারীরা নুরুল আলম (৫৫) নামে এক দরিদ্র কৃষককে গলাটিপে ধরে কিলঘুষি ও লাথি মেরে তার পকেট থেকে আটশত টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের শিকার নুরুল আলম উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তেচ্ছিপাড়া এলাকার বারেক উল্লাহ’র ছেলে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চকরিয়া পৌর সদররের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৯ অক্টোবর বিকালে লিয়াকত আলী (২২) নামে এক অসহায় যুবকের কাছ থেকেও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল বখাটেরা। যুবক লিয়াকত লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্যারচর সিকদার পাড়া এলাকা থেকে সোসাইটি বাজারে কেনাকাটা করতে আসার পথে পৌরশহরের নিউ মার্কেটের সামনে এ ছিনতাইয়ের শিকার হন।

ছিনতাইয়ের শিকার কৃষক নুরুল আলম সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে চকরিয়া প্রেসক্লাবে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তার ছিনতায়ের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এদিন সকালে তিনি নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির রোগাক্রান্ত লোকদের জন্য পানিপড়া নিতে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাও যান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই এলাকার লাঠি ফকিরের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পানিপড়া নিয়ে সাড়ে ১২টার দিকে বাসযোগে চকরিয়া পৌছান। পরে সাড়ে ১২টার দিকে তিনি পায়ে হেটে চকরিয়া পৌর সদররের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ২৫-২৬ বছরের এক বোরকা পড়া মহিলা তিনি কোথায় যাবেন, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করার পরপরই পেছন থেকে ৪-৫জন বখাটে যুবক তাকে এসে ঘিরে ফেলেন। এসময় বখাটেরা ওই মহিলার সাথে কেন কথা বলেছেন এ অজুহাত তুলে অসহায় কৃষক নুরুল আলমকে গলাটিপে ধরে কিলঘুষি ও লাথি মারার পর তার পকেটে থাকা আটশত টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের শিকার অসহায় কৃষক নুরুল আলমের অভিযোগ, দিনদুপুরে প্রকাশ্যে এ ছিনতায়ের ঘটনার সময় আশপাশের লোকজন তা দুর থেকে প্রত্যক্ষ করলেও ছিনতাইকারীদের ঠেকাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

চকরিয়া পৌর সদরের কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন মার্কেটের অলিগলিতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এসব ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল এলাকা থেকে পৌর সদরের মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা অসংখ্য নারী-পুরুষদের সর্বস্ব খুঁইয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে। অনেক সময় সর্বস্ব হারিয়ে গাড়ি ভাড়া না থাকায় তাদের বাড়িতে ফিরতে হাত পাততে হয়েছে অন্যজনের কাছে। এছাড়া স্কুল কলেজ ছুটির পর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মার্কেটের পাশ দিয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠার সময় ছাত্রছাত্রীরাও এসব ছিনতাইকারীর কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

ব্যবসায়ী আরও বলেন, ছিনতাইকারী এসব অপকর্ম সংগঠিত করতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য কয়েক বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন মার্কেটে অবস্থান করে। তাদের সাথে রয়েছে কয়েকজন নারী সদস্যও। বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বামী-স্ত্রী মার্কেটে আসলে তাদের চিহ্নিত করে তারা। কৌশলে ছিনতাইকারীরা মাকের্টে আসা স্ত্রীকে আলাদা করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে করে রেখে স্বামীকে আপনার সাথে কথা আছে বলে অন্য জায়গায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে মারধর ও শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে পকেটে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে কৌশলে ছটকে পড়ে। এ সময় কোন ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলে তাকেও নাজেহাল হতে হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দিনদুপুরে এভাবে প্রতিদিন ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য চলতে থাকলে মার্কেটে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে। লোকজনও ভয় পাবে কেনাকাটা করার জন্য মার্কেটে আসতে।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম শফিকুল আলম চৌধূরী বলেন, চকরিয়া পৌর সদরের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে কৃষকের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। এ ঘটনায় থানাতেও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও যদি এ রকম কোন ঘটনা ঘটে তাহলে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আহনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।