দিনুর আলম

নোবেল জয়ী বিখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর বিখ্যাত
“দি ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্যা সি” বইতে বলেছেন
“A man can be destroyed but not defeated. ”
মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায়না। পাঠক সহজেই উক্তিটির যথার্থতা বুঝতে সক্ষম হবেন
আমার মতো মাথামোটা যারা আছেন তারাও পারবেন বৈকি।
অনন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা জ্ঞানের পিতা সক্রেটিসকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে উপরোক্ত উক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে আসছি।
সক্রেটিস ভীরু ছিলেন না, রাষ্ট্রীয় আইন অমান্যকারী ছিলেন না, কপট ছিলেন না। ফলতঃ রাষ্ট্রীয় নির্মম বিধান মেনে হেমলকের পেয়ালা মুখে নিয়ে বলেছিলেন
” I to die you to live
and you to live
Which of these two is better
Only God knows.”

হ্যাঁ ঐ দুয়ের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ ২৪১৫ বছর পরে রায় দিয়েছে গ্রীসের আদালত।যদিও মুক্তবুদ্ধির চর্চকারী মানুষের হৃদয় অনেক আগেই দন্ডদাতাদের বেঁচে থাকাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন।
যারা সক্রেটিসকে ধ্বংস করতে পেরে কর্তৃত্ব জাহির করেছিল তারা কি সক্রেটিস কে পরাজিত করতে পেরেছে? আর্নেস্ট এর উক্তিকে জোরালো ভাবে সমর্থন করা যায় মহান সক্রেটিসকে নিয়ে।
না এরপরও জ্ঞানপাপীদের যথা শিক্ষা হয়নি।

বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স) কে রক্তাক্ত করলেন, দেশছাড়া করলেন কিন্তু নবী মোহাম্মদ বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত হয়ে আছেন এবং থাকবেন। তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি ধর্মান্ধরা।

জিউদার্নো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে
কিন্তু ব্রুনো যে আগুন মানুষের মনে জ্বালিয়ে গেছেন সে আগুনে নিয়ত পুড়ে ছারখার হচ্ছে ব্রুনোর হত্যাকারীরা। ব্রুনোকে ধ্বংস করতে পেরেছে পরাজিত করতে পারেনি।

মহান কার্ল মার্কসকে সারাটা জীবন ভবঘুরে হয়ে কাটাতে হয়েছে। ক্ষমতাবানদের রক্তচক্ষু, দমন-পীড়ন মার্কসকে বাধ্য করেছিল জিপসি জীবন পালনে।
মৃত্যুর সময় পর্যন্ত মার্কসের কোনো দেশ ছিলনা।
মার্কসের সমাধীতে লিখা আছে তারই উক্তি ” দুনিয়ায় মজদুর এক হও ”
গণ মানুষের জন্য মার্কসের হৃদয়ে যে দরদ ছিল সে দরদ মার্কসকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং রাখবে, হয়তো অনন্ত কাল পর্যন্ত। মার্কসকে পরাজিত করতে পারেনি।

“জীবিত মুজিব অপেক্ষা মৃত মুজিব অনেক শক্তিশালী”
উক্তিটির সত্যতা প্রমাণিত।
১৫ আগস্ট হয়ে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে শোকাবহ দিবস। মুজিবের দেহ বিনাশ করতে পেরেছে কিন্তু মুজিব পরাজিত করতে পারেনি।
” এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে ”

একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে খুব বেশি কিছু প্রয়োজন হয়না সবসময়। মার্কিন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত উক্তি

” Democracy is the government
of the people
by the people
and for the people”

আব্রাহাম লিংকন মার্কিন দেশের প্রেসিডেন্ট এই পরিচিত অপেক্ষা গণতন্ত্র বিষয়ক উক্তিটির প্রবক্তা হিসেবে আমার কাছে অধিক পরিচিত। আব্রাহাম লিংকনকে খুন করতে পেরেছে পরাজিত করতে পারেনি।

“I have a dream that one day this nation will rise up, live out the meaning of it’s creed.”
মার্টিন লুথার কিং খুন হয়েছিলেন কিন্তু তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মার্টিনকে পরাজিত করতে পারেনি খুনিরা, মার্টিন বেঁচে আছেন অনেকের আরাধ্য স্বপ্ন হয়ে।

এতকিছুর পরও আমাদের সবক হয়নি মোটেও।
আবরারকে যারা হত্যা করেছে তারা আমার মতো গর্দভ শিক্ষার্থী নয়। দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষার্থী তারা।
তারা ভলতেয়ার পড়ে থাকবে হয়তো
” I might disagree with your opinion, but i am willing to give my life for your right to express it” ( Volteire)
না তারা ভিন্ন মতের জন্য জীবন দেয়নি বরং জীবন নিয়েছে।

তারা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর ধারাটি পাঠ করেছে হয়তো।
অনুচ্ছেদ ৩৯
(১) প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক,জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, নৈতিকতা রক্ষার স্বার্থে বা আদালত অবমাননা, মানহানি বা কোনো অপরাধ সংঘঠনে প্ররোচনা দিতে পারে এসব ক্ষেত্রে আইনের দ্বারা নির্ধারিত যুক্তিসঙ্গত বাধা- নিষেধ সাপেক্ষে –

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের কথা বলার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা হলো।
(খ) সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন
” এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।

ভিন্ন মতের প্রতি সমর্থন বা শ্রদ্ধা কোনো কালেই আমাদের ছিলনা। আমরা বাতিলে বিশ্বাসী। আমার মত ছাড়া সকল মত বাতিল। অন্যের মতকে বাতিল করে দেওয়া যেনো আমাদের জন্মগত অধিকার। না কেবল জবানে বাতিল করে শান্ত থাকতে পারিনা আমরা। ভিন্ন মতের প্রাণ নিতে পারলেই আমাদের মত টেকসই হয়। যদি এমনটা পাঠক বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে আবারও আর্নেস্ট এর উক্তিটি মনে করিয়ে দিতে চাই।

” মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায়না।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আর বাহাস করতে চাইনা। অামাদের ছাত্র সংঘঠনগুলো সত্যিকার অর্থেই শিক্ষা বান্ধব রাজনীতিতে ফিরে আসুক।
আবরারের আত্মা সুখে থাকুক!
দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান খুনিদের সুমতি হোক!